বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো হতো: সিইসি

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো হতো সেটা সবাই অনুভব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এখানকার কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবেন জাপানিরা। ওরা আমাদের নির্বাচনটাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে জন্য ওরা পর্যবেক্ষণ করতে চাচ্ছেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। তারা আরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন এবং শেষ অবস্থাটা আমরা তাদের অবহিত করেছি; মনোনয়ন জমা পড়েছে, ওর পরে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছি।’
আজকে থেকে প্রচারণা শুরু হলো। তার আগে আমরা দেখেছি যে, আসন ভাগাভাগি হয়ে গেছে যে দলগুলো অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে। নানা পদক্ষেপ নিয়ে আপনারা বড় দলকে নির্বাচনে আনতে পারেননি। আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট এবং কোনো অস্বস্তি আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘অস্বস্তি বা স্বস্তি কোনো কিছুই আমার মধ্যে নেই। আমার দায়িত্বটা আমাদের নির্বাচন যেভাবে করতে হয় নির্বাচন কমিশন সরকারের সহায়তা নিয়ে, পুলিশ-প্রশাসন সবার সহায়তা নিয়ে নির্বাচনটা করতে যাচ্ছি।
‘আমার ব্যক্তিগত স্বস্তি বা অস্বস্তি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল অংশগ্রহণ করছে না। অংশগ্রহণ করলে অনেক ভালো হতো। আপনারা জানেন, আমরা প্রথম থেকেই তাদের আহ্বান জানাচ্ছিলাম যে, আপনারা অংশগ্রহণ করুন। আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তারা সাড়া দেননি,’ যোগ করেন তিনি।
এর আগে আপনি বলেছিলেন বিএনপি অংশ নিলে দেশের মঙ্গল, এখন বিএনপি অংশ নিচ্ছে না—এ ব্যাপারে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যেটা আগে বলেছি, অংশগ্রহণ করলে নির্বচনটা অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে। না নিলে কী হবে সেখানে আমি যাচ্ছি না। অংশ নিলে ভালো হতো সেটা সবাই অনুভব করেছে।’
আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। সেটা নির্বাচনের পরে দেখা যাবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেটা হলো সব দেশ আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। আমাদের দাতা দেশগুলো দেখতে চাচ্ছে নির্বাচন; সেটাকে চাপ বলেন বা সেনশেটাইজেশন বলেন, ওরা যেসব দৌড়-ঝাঁপ করছে, আমরা দেখেছি। যার ফলে বলেছে নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে। আমাদের তরফ থেকে আমরা বলেছি যে, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সদস্য এবং কমিটি অব নেশনসের আমরা সদস্য। আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হোক, সুন্দর হোক; বহির্বিশ্বে নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্যতা পাক সেই প্রত্যাশা সবার মতো আমাদেরও আছে,’ বলেন হাবিবুল আউয়াল। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ওপর কমিশন জোর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা প্রসঙ্গে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সেটা দেখা যাক। প্রতিহত যদি উনারা করতে চান সেটা উনাদের ব্যাপার, রাজনৈতিক কৌশল। সেটার ব্যাপারে আমরা কোনো বক্তব্য দেবো না।’
সিইসি বলেন, নির্বাচনের ফেয়ারনেস নিয়ে যদি সংশয় থাকে, তাহলে সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হলে সংশয় কিছুটা কমবে বলে আশা করি। অনেকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে। আমরা অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যতদূর সম্ভব ভোটগ্রহণ শুরুর আগে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। এটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। তবে কিছু কিছু এলাকায় সকালে পাঠানো সম্ভব হবে না, যেমন দুর্গম-দূরবর্তী, হাওর-বাওর এলাকা অথবা যেখানে জলপথে যেতে হয়। এছাড়া দ্বীপাঞ্চলেও সম্ভব হবে না। এজন্য পরিপত্র জারি করেছি। ব্যালট পেপার ভোট গ্রহণের পূর্বে সকালে যাবে। তবে রিমোট এলাকা বা যেখানে সকালে পাঠানো যাবে না, সেসব এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তারা আমাদের কাছে অনুমোদন গ্রহণ করবেন।
স্বচ্ছ বাক্স ও সকালে ব্যালট বুঝিয়ে নিতে পোলিং এজেন্টদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রস্তাব আমরা বিচার বিবেচনা করেই অনুমোদন করে দেব। যতদূর সম্ভব ব্যালট পেপারগুলো ভোটের দিন সকালে যাবে। তবে ব্যালট বক্সগুলো দুই থেকে চারদিন আগেই যাবে। ব্যালট বক্স স্বচ্ছ কিনা তা দেখে নিতে হবে। এজন্য কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকতেই হবে। পোলিং এজেন্টেদের দেখে নিয়ে স্বাক্ষর করতে হবে। ব্যালট পেপার খালি ছিল ও সকালে ব্যালট গেছে এটা সবাইকে দেখে নিতে হবে। এতে করে ফেয়ারনেস নিয়ে সংশয় থাকলেও কিছুটা দূর হবে বলে আশা করি। যদি রিমোট এলাকা হয় দরকার হলে হেলিকপ্টপারে করে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।