মিয়ানমারে আরও একটি শহর ও সীমান্ত ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ নিলো বিদ্রোহীরা
মিয়ানমারে আরও একটি শহর ও গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ হারালো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ভারত সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের খামপাত শহরটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ন্যাশনাল আর্মি।
চিন ন্যাশনাল আর্মির মুখপাত্র সালাই লিয়ান পি জানিয়েছেন, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী শহর খামপাতের দখল ছেড়ে দিয়ে পিছু হটেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এমনকি জান্তা সেনারা বিমানবাহিনীর কাছ থেকে ব্যাপক সহায়তা পেয়েও শহরটি ধরে রাখতে পারেনি।
অন্যদিকে, তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সম্মিলিত জোটের কাছে গুরুত্বপূর্ণ লাউকাইং সীমান্ত ক্রসিংয়েরও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) স্থানীয় মিডিয়া এবং নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, তারা শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে কোকাং স্ব-শাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাউকাইং শহরের সীমান্ত গেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এ নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের কাছে পাঁচটি সীমান্ত গেটের নিয়ন্ত্রণ হারালো।
লাউকাইংয়ের একজন বাসিন্দা মঙ্গলবার রাতে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, এমএনডিএএ সদস্যরা সোমবার সীমান্ত গেটটি দখল করে নেয়। এসময় গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জান্তা সেনারা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমপর্ণ করে।
আরেকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, এমএনডিএএ লাউকাইং সীমান্ত বাণিজ্য অঞ্চলে তাদের পতাকা উত্তোলন করেছে।
লাউকাইং সীমান্ত গেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) গত অক্টোবরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার জন্য তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে জোট গঠন করে। সশস্ত্র এই জোট নিজেদের ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ বলে থাকে।
গত ২৭ অক্টোবর তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সম্মিলিত অভিযান অপারেশন-১০২৭ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক জান্তা সেনা আত্মসমর্পণ করেছে। এই সময়ে এই তিন বাহিনী জান্তা বাহিনীর অন্তত ২৭০টি ঘাঁটি দখলে নিয়েছে।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জান্তা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করেছিল। অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তা প্রতিবাদকারীদের ওপর ব্যাপক দমন–পীড়ন শুরু করে। তাদের সেই কর্মকাণ্ডই তৃণমূল বিদ্রোহীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং কিছু জাতিগত গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে এই লড়াই দেশজুড়ে এই বিদ্রোহী জোটসহ অন্যান্য গোষ্ঠীকে বিজয় এনে দিচ্ছে।
সশস্ত্র জোটটি জান্তা বাহিনীর দুই শতাধিক সামরিক ঘাঁটি দখল ছাড়াও চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট দখলসহ বেশ কয়েকটি বিজয় দাবি করেছে। এর ফলে অর্থ সংকটে থাকা মিয়ানমার জান্তার আয়ের পথ আরও সংকুচিত হয়েছে।
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের এই লড়াইয়ে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। চলমান এ লড়াই চীনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। চীনের কৌশলগত মিত্র মিয়ানমার অনেক অংশে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
চীন তার সীমান্তের কাছে যুদ্ধ বৃদ্ধির ঘটনার পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী জোটের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে চীন। উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে গত ১৪ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় জানায় বেইজিং।
তবে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, শান প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্তত পাঁচটি জনপদে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি দুটি টাউনশিপ দখলের দাবি করেছে।
এমএনডিএএ সমর্থিত একটি অনলাইন মিডিয়া গ্রুপ তাদের ফেসবুক পেজে বলেছে, এমএনডিএএ’র ঘাঁটিগুলোতে জান্তা বাহিনী বিমান হামলা চালানোয় কোকাং অঞ্চলে লড়াই আবার শুরু হয়েছে।