ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ পিবিআই হেড কোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংঘবদ্ধ মাদক কারবারী, সন্ত্রাসী ও জুয়াড়ীদের অপরাধ কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নির্মম হত্যার শিকার হয় গরীব কৃষক হাশিম। ঢাকার নবাবগঞ্জে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারী, সন্ত্রাসী ও জুয়াড়ীদের অপরাধ কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নির্মম হত্যার শিকার হওয়া গরীব কৃষক হাশিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা।
জনৈক মোঃ হাশিম (৬৫), পিতা মৃতঃ তজুমদ্দিন, সাং-মাতাবপুর, ইউপি-কৈলাইল, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-ঢাকা তার বাড়ির অনুমান ৫০০ গজ দক্ষিণে সবজি ও ঘাসের আবাদ করে আসছিলেন। তিনি গত ১৬/০৪/২৩ খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ০১.৩০ ঘটিকায় তার উক্ত জমির ঘাস পাহাড়া দেওয়ার জন্য নিজ বাড়ি হতে জমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। পরদিন ১৭/০৪/২৩ খ্রিঃ সকাল অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকায় তার প্রতিবেশী বাবুল ও ভুলু মিয়াদ্বয় মোঃ হাশিমের লাশ রক্তাক্ত জখম ও গলাকাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তার বাড়ীতে সংবাদ দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তার মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রেরণ করে। উক্ত ঘটনায় মৃত মোঃ হাশিমের ছেলে মোঃ আরিফ বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে নবাবগঞ্জ থানার মামলা নং-১২, তারিখঃ ১৮/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/৩৪ দঃবিঃ রুজু হয়। থানা পুলিশ মামলাটির রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় গত ১৫/০৬/২০২৩ খ্রিঃ পুলিশ হেডকোয়াটার্র্সের আদেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে এবং পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা এর সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকতা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) রফিকুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এসআই খোন্দকার মনিরুজ্জামান, এসআই আনিসুর রহমান, এসআই ইমরান আহম্মেদ, এসআই শহিদুল ইসলাম, এসআই জামিল হোসেন ও এএসআই জিয়াউর রহমান সহ একটি চৌকষ টীম গঠন করে হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করে।তদন্তকালে জানা যায় যে, ডিসিষ্ট মোঃ হাশিম গত ১৭/০৪/২৩ খ্রিঃ রাতে তার জমির সবজি ও ঘাস পাহারা দিচ্ছিলেন। ঐদিন গভীর রাতে সন্দিগ্ধ আসামী ১। মোঃ কামাল (৩৬), পিতাঃ ছকেল উদ্দিন, ২। মেছের আলী (৪২), পিতাঃ গোলাম আলী, ৩। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), পিতাঃ লতিফ মেম্বার, সর্ব সাং-সিরাজপুর, ৪। মোঃ নাছির উদ্দিন @ নসু (৪৬), পিতাঃ মোহাম্মদ আলী, সাং-আটিপাড়া, সর্ব থানাঃ সিঙ্গাইর, জেলাঃ মানিকগঞ্জ, ৫। মোঃ পিন্টু চৌধুরী (৩০), পিতাঃ ফারুখ চৌধুরী, ৬। মোজলেম (৫৫), পিতা মৃতঃ কালু শেখ, উভয় সাং-মাতাবপুর, থানাঃ নবাবগঞ্জ, জেলাঃ ঢাকা ও ৭। সোহেল পিতা ও সাং অজ্ঞাত গন ঘটনাস্থল সংলগ্ন স্কুল মাঠের কোনায় গাঁজা সেবন করে ও জুয়া খেলে। মূলতঃ রাতে ঘটনাস্থলের পাশের স্কুল ভবনটি আসামীদের মাদক সেবন, মাদক ক্রয়-বিক্রয়, বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন আদায়, চাঁদা আদায়, বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির পরিকল্পনা, পার্শ্ববর্তী নদীতে চলমান ট্রলার ও কার্গো হতে চাঁদা আদায় সহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি অপরাধ সংগঠনের পরিকল্পনাস্থল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
উল্লেখ্যআসামীরা ঘটনার রাতে জুয়া খেলা, মাদক সেবন এবং মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছিলো, ডিসিষ্ট মোঃ হাশিম তার জমির ঘাস ও সবজি পাহারা দেওয়ার কারণে অপরাধীদের এহেন অপরাধ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় হাশিমকে তারা অত্র এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে। হাশিম তাদের কথা না শোনায় এবং তর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাকে ঘাস কাটার কাচি/কাস্তে দিয়ে নাছির উদ্দিন @ নসু ও জাহাঙ্গীর আলম দ্বয় অন্য আসামীদের সহযোগিতায় ডিসিস্টকে গলা কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরে আসামীগন যে যার মত ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। উক্ত আসামীদের মধ্যে ১-৬নং আসামীদের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ পিন্টু চৌধুরী, মোজলেম, মেছের আলী ও মোঃ কামাল গন বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মতে জবানবন্দি প্রদান করে।