শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

শ্রীপুরের কেওয়া গ্রামে মহান সাধক দরবেশ আহাদ আলী আকন্দের ওরস মাহফিল শুরু

আফরোজা আক্তার, এম, এ , শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি / ৩৮৬ Time View
Update : শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামে হযরত গাউছুল আজম দরবেশ মৌলভী মোঃ আহাদ আলী আকন্দ প্রকাশ আহাদ চাঁন শ্রীপুরী (রহ:) এর ৮৭তম পবিত্র বার্ষিক ওরশ মাহফিল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৯ শে ডিসেম্বর শুরু হওয়া ওরস মাহফিলের প্রধান দিবস ১৬ পৌষ তথা রোববার (৩১শে ডিসেম্বর)।

মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিলের জন্য আধ্যাত্মিক পুরুষ মহান সাধক দরবেশ আহাদ আলী আকন্দ আজ থেকে শতাব্দী বছর আগে মানুষকে তার জীবন পরিচালনার জন্য সমবেতভাবে ধর্র্মীয় দিকনির্দেশনা, ইসলামের দাওয়াত, ভক্ত-অনুরক্তদের মিলনের উদ্দেশ্যে ওরশ মাহফিলের কার্যক্রম শুরু করেন। সেই থেকে অদ্যবধি আগামী ৩১ ডিসেম্বর ১৬ পৌষ মোতাবেক রোববার প্রধান দিবসটি পালিত হবে।

দরবেশ আহাদ মঞ্জিল দরবার শরীফ সূত্রে জানা গেছে, এই দিনটি পালনের জন্য এক মাস আগে থেকেই সকল প্রকার প্রস্তুতি শুরু হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওরসের ৩ দিন আগেই ভক্ত অনুরক্ত গণ দরবেশ আহাদ মঞ্জিল দরবার শরীফে আসতে শুরু করেন। দরবার সহ আশপাশের এলাকায় এক ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

দরবেশ আহাদ আলী আকন্দের আওলাদগনের কাছ থেকে জানা গেছে, তার সিলসিলায় তরিকা প্রচারের জন্য তার প্রথম ছেলে মৌলভী মোহাম্মদ শহীদ সাদির আকন্দকে প্রথম খলিফা নিযুক্ত করেন। তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করার কারণে ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় সাদির আকন্দ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে মহান ¯্রষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে দরবেশ আহাদ আলী আকন্দ ধরাধাম ত্যাগ করেন। মৌলভী মোঃ সাদির আকন্দ নিজের অনুপস্থিতি পূরণের জন্য তার ছোট ভাই ফকির আলমগীর বাদশা আকন্দকে তরিকা প্রচারের জন্য খেলাফত প্রদান করেন এবং আহাদ মঞ্জিলের খলিফা নিযুক্ত করেন।

এদিকে ১৯৬৫ সনে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে মৌলভী মোঃ সাদির আকন্দ গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানের পাশাপাশি তরিকা প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সনে তিনি গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সনে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদ করেন। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ১৯৭১ সনের ৩ এপ্রিল টঙ্গী অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের সন্নিকটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে সাতটি বুলেটের আঘাতে হত্যা করে মরদেহ নিয়ে যায়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেখানেই থেমে যায়নি। এদেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় ছোট ভাই ফকির আলমগীর বাদশা আকন্দকে শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া গ্রামে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত অন্যান্য শহীদদের সাথে গণ কবর দেওয়া হয়। সব শেষ দরবেশ আহাদ আলী আকন্দের ছেলে ফকির আলমগীর বাদশা আকন্দ কাউকে খেলাফত দিয়ে যেতে পারেননি। পরে অবশ্য ওই তরিকার কোন খেলাফতপ্রাপ্ত খলিফা না থাকলেও দরবেশ আহাদ আলী আকন্দের উত্তরসুরিরা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ওরশ মাহফিল করে আসছেন। খলিফা সংকটের কারণে দরবেশ আহাদ আলী আকন্দের উত্তরসূরিদের কেউ কেউ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কামেল অলি আল্লাহর সোহবতে থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত হয়ে তরিকা প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরুষদের কাছ থেকে জানা গেছে, তরিকার কার্যক্রম কোনো ব্যক্তির কাজ নয়। এটি আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের (সা:) নির্দেশেই আল্লাহর ওলীগণ সম্পাদন করে থাকেন। কারো সিলসিলায় কোন যোগ্য পুরুষ না থাকলে ভিন্ন জায়গা থেকে হলেও সিলসিলার শূন্য পদ পূর্ণ করা হয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের (সা:) বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলো কাজের মধ্য থেকে ওরস মাহফিলের কাজটিও চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর