নির্বাচন বন্ধ করবে এতো সাহস বিএনপির নাই: প্রধানমন্ত্রী
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করার সাহস বিএনপির নাই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার বিকালে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন পড়ে না। তারা (জিয়া-এরশাদ) ভোট চুরি করে, এটা আমার কথা না। হাইকোর্টের রায় আছে— জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না বলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এখন তারা আবার নির্বাচন প্রতিহতের আহ্বান জানাচ্ছে। স্পষ্ট কথা নির্বাচন বন্ধ করবে এতো সাহস তাদের নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। এসময় তরুণ ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণরাই হচ্ছে আমাদের অগ্রদূত।
বক্তব্যের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বছরে (২০২৪) পদার্পণ করলাম। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে। মানুষের ভাগ্য গড়েনি। এই দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। যে জয় বাংলা স্লোগানে দেশের মানুষ তাজা রক্ত দিয়েছিল, সেটিও নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন বাংলাদেশে ফিরে আসি। আমার ফেলে রাখা আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি, হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাবো, বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। হ্যাঁ, এটা পেয়েছি। একটা প্রত্যয় ছিল, সবার মুখে খাদ্য তুলে দেবো। কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে উন্নত জীবন দেবো। ক্ষমতায় এসে সেই কাজ শুরুও করেছিলাম। কিন্তু গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
তিনি বলেন, তবে তাদের দুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ২৩৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছি। ২০১৩-১৪ সালে আগুনে মানুষ পুড়িয়েছে, কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন, পল্টন অফিস থেকে রিজভী দেয়। ওইভাবে নমিনেশন বিক্রির ফলে তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। দোষ দেয় আমাদের ওপর।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অথচ আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যাচার সয়েছে, জেলে খেটেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কেন নির্বাচন বানচাল করবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে উন্নয়ন হয়েছে। ৭৫’-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে ও সংবিধান লঙ্ঘন করে..তারা মানুষের ভাগ্য গড়েনি।
তিনি বলেন, তাদের আমলে ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলতেও ভয় পেতেন। সে সময় অনেকে লুকাতেন, ভয় পেতেন..তারা (বিএনপি) ঠিক সেই অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া, তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পাশাপাশি এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে গতিটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করেছিলেন, সেটিও থেমে যায়। সেই যে ২৭৭ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় জিয়ার আমলে ও এরশাদের আমলে..কোনো আমলেই সেই মাথা-পিছু আয় আর বৃদ্ধি পায়নি। বরং জিয়ার আমলে প্রতি বছর তা মাইনাস হতে থাকে। তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য না গড়লেও ক্ষমতাসীনদের ভাগ্য গড়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।
এর আগে বিকেল সোয়া তিনটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগান মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। এসময় স্লোগান স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশের পতাকা হাতে স্লোগানের জবাব দেন তিনি। পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।