ভোটের দিন বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা করতে পারে- ওবায়দুল কাদের
ভোটের দিন বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংসতা করতে পারে আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, এখনও তারা ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচনের দিন সারাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংসতা করতে পারে। নির্বাচনকে ঘিরে অনেক গুজব নানাভাবে বিএনপি-জামায়াত ছড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ভুয়া ভিডিও ছড়াচ্ছে। আমরা তাই সতর্ক আছি ও সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।’
নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানে প্রত্যেক ভোটারকে সহযোগিতা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন অপশক্তি যেন নির্বাচনের দিন ও ফলাফল ঘোষণার পরও যেন হামলা, সংঘর্ষ ও সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ভোটারদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, নিজে ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে সকাল-সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং অন্যকেও ভোটদানে উৎসাহিত করবেন।’
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এক বিদেশি সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশ কেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে?
জাপানের সেই সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ ও জাপানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের (চীন ও রাশিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে? এ সম্পর্ক রাখার সুবিধা কোথায়?
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সাথে শত্রুতা নয়। আমাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব আছে। বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। উন্নত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নের জন্য। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পর্ক আছে কিছু দেশের সাথে, যেমন ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স। মেট্রোরেলের অর্থ জোগাচ্ছে জাপান। আমার পার্থক্য করা উচিত হবে না। বন্ধু বন্ধুই। সবাই আমাদের বন্ধু।’
আওয়ামী লীগের এই সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। কখনো কখনো সাংবাদিকদের প্রশ্নকে ওবায়দুল কাদের পক্ষপাতমূলক বলেও অভিযোগ করেন।
এই নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধী দল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (অনুশোচনা) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।’
বিদেশি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করছে, বাংলাদেশে একটি ওয়ান সাইডেড (একতরফা) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কারণ, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে ওয়ান সাইডেড ইলেকশন হচ্ছে না, এখানে হচ্ছে ওয়ান সাইডেড বিরোধিতা।’
বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার ডামি নির্বাচন করছে। ডামি প্রার্থী দিয়েছে। এখন ডামি ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশে ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।
বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচন প্রতিহত করবে না। একই সময় তারা আবার হরতাল দিচ্ছে। এটা স্ববিরোধিতা কি না। খবরে দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি তাদের কর্মসূচি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন কি না। একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বায়াসড (পক্ষপাতমূলক) প্রশ্ন করছেন কেন? এটা বেশি বায়াসড।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মানুষের ধারণা আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ধারণা কী, তারা কয়টি আসন পাচ্ছে? মানুষের আরেকটি ধারণা, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হবে। বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?
এমন দুটি প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ইনশা আল্লাহ নির্বাচনে বিজয়ী হব। কত আসন, সেটা আমি এখনই বলতে চাই না। আর নির্বাচনের ফলই বলে দেবে বিরোধী দল কে হবে।’
আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট আশা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথাই বলব, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।’
ভোটের দিন বিএনপির ডাকা হরতালসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হরতাল এমনিতেই আন্দোলনের মরচে ধরা হাতিয়ার। এই মরচে ধরা হাতিয়ার বিএনপি আগেও প্রয়োগ করেছে। কোনো লাভ হয়নি। সামনে লাভ হবে, এমন আশা করেও লাভ নেই।’
বিএনপি হরতাল ডেকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে বিএনপির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আহ্বান করবেন কি না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে, তা তারা স্পষ্টভাবে বলেছে। নির্বাচনে এখন প্রকাশ্যে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তার সমমনারা। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা আসবে না, কেন ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে না—এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই জানতে চাই।’
বিএনপির হরতালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমবে কি না। যদি তা-ই হয়, তাহলে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা থাকবে? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নাই। সব সময় নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়, ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করা, কেন্দ্রে আনার জন্য নেতা-কর্মীদের টিম আছে। তারা সেই কাজ করবে। বেশির ভাগ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। যারা একটু হয়তো দেরি করছে, তাদের একটু তাড়াতাড়ি আসার জন্য হয়তো অনুরোধ করতে পারে। সেটা আমাদের টিমগুলো করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, অর্থবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।