রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

৯ ঘন্টায় অজ্ঞাত লাশের রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতার করল বাগেরহাট পিবিআই

শেখ সাদী খান / ৩৪২ Time View
Update : শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৪

গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ বিকেল অনুমান ৩ ঘটিকায় ফকিরহাট থানাধীন কাটাখালী-মংলা রোডে জয় জুট মিলের সামনে জনৈক মুরারী মোহন দেবনাথ এর বাগানে একটি অজ্ঞাত মহিলার লাশ দেখে স্থানীয়রা ফকিরহাট থানাকে অবগত করে। ফকিরহাট সার্কেল অফিসার ও থানার অফিসার্স ইন চার্জ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে অজ্ঞাত লাশ সনাক্ত করার জন্য পিবিআই বাগেরহাট এর পুলিশ সুপার মহোদয়কে ফোন করলে পিবিআই বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার জনাব আবদুর রহমান একটি টিমসহ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে অজ্ঞাত নারীর লাশ সনাক্ত করেন। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ভিক্টিমের নাম -হামিদা বেগম, পিতা- বারেক গাজী, মাতা-মারিয়া বেগম গ্রাম-কৈলাশগঞ্জ দাকোপ, খুলনা।
এ সংক্রান্তে ফকিরহাট থানায় অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামী করে ভিক্টিমের বোন ছালমা খাতুন (২৯) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করলে অফিসার্স ইন চার্জ একটি হত্যা মামলা নং-০৩ তারিখ ৫/০১/২৪, দি পেনাল কোড ধারা ৩০২/২০১/৩৪ রজু করেন।

ঘটনাটি পিবিআই এর সিডিউলভুক্ত হওয়ায় ভিক্টিমের ছেলে ও ভাই এর সাথে কথা বলে ভিক্টিমের জীবন যাপন সর্ম্পকে জেনে পিবিআই বাগেরহাট ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিক্টিমের পরিবার থেকে জানা যায় ভিক্টিম গত ৪ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। গোপনসূত্রে জানা যায় ভিক্টিমের স্বামী ছানাউল্লাহ পাটোয়ারী মারা যাওয়ার পর ভিক্টিমের সাথে জনৈক রাজমিস্ত্রী মোঃ আমানুল্লাহ হোসেন এর সাথে প্রেমের সর্ম্পকের সৃষ্টি হয়। এই সূত্র ধরে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই পুলিশ সুপার জনাব আবদুর রহমানে এর নেতৃত্বে পিবিআই বাগেরহাট এর একটি টিম রাজমিস্ত্রী মোঃ আমানুল্লাহ হোসেন পিতা মোঃ শফিকুল ইসলাম গ্রাম-চরকুশোডাঙ্গা ডাকঘর-ভান্ডারপোল কয়রা, খুলনা কে রাত অনুমান ১১.৪৫ ঘটিকার সময় ইলাইপুর (মোমিনবাগ) রুপসা, খুলনা থেকে তার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পরপরই সে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার ভাড়াবাসা তল্লাশী করে ভিক্টিম হামিদা বেগম এর পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, আসামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও তার দেখানো মতে পরদিন অর্থাৎ ০৬/০১/২৪ তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকায় তার ভাড়া বাসার রান্নাঘর কাম বারান্দায় থাকা ঢালাই (রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত) এর কাজে ব্যবহৃত কড়াই এর নিচ থেকে ভিক্টিমের মোবইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মোঃ আমানুল্লাহ জানায় বছর দুয়েক আগে সে ভিক্টিম হামিদা বেগম এর গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজে যায়। সেখানেই হামিদা বেগমের সাথে তার পরিচয় ও প্রেম হয়। তারা শরিয়া মোতাবেক ইমাম এর মাধ্যমে বিয়ে করলেও কোন কাবিন হয়নি। ভিক্টিম হামিদা বেগম তার ভাড়া বাসায়ও এসে থেকেছে। আসামীর ভাষ্যমতে ভিক্টিম হামিদা বেগম আসামীর সাথে সর্ম্পক রাখা ছাড়াও একাধিক অবৈধ শারীরিক সর্ম্পক করে। অনেকবার শপথ করে বোঝানোর পরও ভিক্টিম হামিদা বেগম অবৈধ সর্ম্পক ছাড়তে পারে না। এ সব বিষয়ে ভিক্টিমের সাথে বোঝাপড়া করার জন্য আসামী গত ৪ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ ভোরে ভিক্টিমকে আসতে বলে। তারা উভয় ৪ জানুয়ারী ২০২৪ বেলা অনুমান ১০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে এসে উপস্থত হয় এবং বাগানের মধ্যে বসে কথা বলতে থাকে। আসামী ভিক্টিমের গলায় ভিক্টিমের ব্যবহৃত ওড়না জড়িয়ে ধরে তার অবৈধ সর্ম্পকের বিষয়ে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ভিক্টিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তখন আসামী ভিক্টিমের ব্যবহৃত চাদর দিয়ে ভিক্টিমকে ঢেকে দিয়ে সেখান থেকে তার ভাড়া বাসায় চলে যায়। সে ঐদিন সন্ধ্যায় আবারও ঘটনাস্থলে আসে এবং চাদর উচিয়ে ভিক্টিমকে দেখে আবার ঢেকে রেখে চলে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় সে একাই উক্ত হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে তার সাথে আর কেউ ছিলো না।

আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি এসআই (নিঃ) জনাব সুব্রত সরকার তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদান করবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর