ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটের গুরুত্ব
আধুনিক বিশ্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় ত্রয়োদশ শতকে। ইংল্যান্ডে সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থার সূচনা হয়। এরপর ১৬৯৪ সালে ট্রিনিয়্যাল অ্যাক্ট এবং ১৭১৬ সালের সেপ্টেনিয়্যাল অ্যাক্টের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়। ১৮৭২ সালে গোপনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদানের পদ্ধতি প্রণীত হয়। ১৯২৮ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকার নীতি গ্রহণ করা হয়।
ভোট শুধু শুধু রাজনৈতিক বিষয় ও পার্থিব ক্ষমতার বিষয় নয়। বরং এর মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ভাবে মানুষের বসবাসের জন্য দলপ্রধান বা নেতা নির্বাচন করা হয়ে থাকে। যিনি বৃহত্তর একটি গোষ্ঠী বা জাতিকে সুচারু ভাবে পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। সুখ-সমৃদ্ধিতে বসবাসের জন্য যোগ্য নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট দেওয়া জরুরি। যেসব উদ্দেশ্যে এসব নির্বাচন হচ্ছে তার বাস্তবতা সামনে রাখলে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো চলে আসে-
১. আপনার ভোট ও সাক্ষ্যের কারণে যে ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাবেন, তার মাধ্যমে যত ভালো বা মন্দ কাজ হবে তার দায়দায়িত্ব আপনার ওপর বর্তাবে। আপনি পাপ ও পুণ্যের সমান অংশীদার।
২. মনে রাখতে হবে, যখন কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে মানুষ কোনো ভুল করে, তখন তার প্রভাব ওই ব্যক্তির ওপর সীমাবদ্ধ থাকে, সওয়াব ও গুনাহও সীমাবদ্ধ থাকে। আর যখন দেশ ও জাতির কোনো বিষয়ে ভুল করে তখন এর প্রভাব পুরো জাতির ওপর পড়ে। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো ছোট একটি ভুল পুরো জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। এ জন্য এর প্রতিদান ও শাস্তিও বহুগুণে বেড়ে যায়।
৩. কোরআনের দৃষ্টিতে সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হারাম। সুতরাং আপনার নির্বাচনী এলাকায় যদি কোনো বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও চিন্তার অধিকারী কোনো প্রার্থী নির্বাচন করা হয়, তবে তাকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি করা গুনাহের কাজ।
৪. যে প্রার্থী ইসলামবিরোধী মনোভাব পোষণ করেন তাকে ভোট দেওয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার নামান্তর ও গুনাহের কাজ।
৫. টাকার বিনিময়ে ভোট দেওয়া নিকৃষ্টতম ঘুষ। সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কেননা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেই ব্যক্তি যে অন্যের পার্থিব জীবন সাজাতে গিয়ে নিজের দ্বিনদারী ধ্বংস করে।
এ জন্য ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, অযোগ্য কাউকে নির্বাচিত করলে তার মাধ্যমে সমাজে যত অরাজকতা সৃষ্টি হবে এর কারণে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা করতে হবে ভোটার বা দলপ্রধান নির্বাচনকারীকে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক সৎ কাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৮৫)।