জনগণ একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে: ওবায়দুল কাদের
জনগণের রায়ে উৎসবমুখর, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বিচারে মানব হত্যা, বাংলাদেশ বিরোধী স্বার্থান্বেসী মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণের এই ঐতিহাসিক রায় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে।জনগণের এ ম্যান্ডেট আমাদের দায়িত্ব এবং একই সঙ্গে শক্তি সাহস ও উৎসাহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। জনতার রায়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব নতুন রেকর্ড স্থাপন করে টানা চতুর্থবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা পুনর্বার প্রমাণ করেছেন একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কার্যকর থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এইদেশের সংবিধান অনুযায়ী একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। আমরা সেইভাবেই নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আমরা আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আজ সকালে ভারত, রাশিয়া, চীন, ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জনতার এই বিশাল রায়ের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি এ রায়ের প্রতিদান নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে অব্যশই উপহার দিবেন।শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আপনাদের গণমাধ্যমের সাহায্যে দেশবাসীকে জানাতে চাই, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করবেন। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া ওয়াদা বাস্তবায়ন করবো। নবউদ্যমে এই দেশ এগিয়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, গণমাধ্যমসহ বিদেশি সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক সকলেই নির্বাচন পর্যবেক্ষন করেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও শক্তিশালী করবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত এবারও ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্রের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে মানুষ দিয়ে দিয়েছে। বারবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির জন্য এখন আগামী ৫ বছর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করণীয় নেই।তাদের সকল অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত, ভিত্তিহীন ও মনগড়া। আজ সকালেও বিএনপি নেতা মইন খান প্রেস বিফ্রিং করে মিথ্যার ঢালি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এমন মিথ্যাচারই তাদের এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী। জনগণ এসব নব্য গোয়েবলসদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নিজেই বারবার ভুল রাজনীতি অনুসরণ করার কারণে একটি অকার্যকর এবং ব্যর্থ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের নেতাকে?
২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মামলায় সাজা প্রাপ্ত এবং পালিয়ে আছে বিদেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক গোপন তার বার্তায় তারেক জিয়াকে বাংলাদেশের সহিংসতার রাজনীতির গডফাদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এ ধরণের একজন অপরাধীর আজ্ঞাবহ কর্মী হয়ে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ডঃ মইন খানের মত বিদ্বান ব্যক্তিরা যখন প্রতিদিন লজ্জাস্করভাবে মিথ্যাচার করে যায়, ফরমায়েশি বক্তব্য দেয় তা দেখে একজন রাজনীতির মানুষ হিসেবে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।
মানুষ বিএনপি-জামাতে দেখিয়েছে যে অপরাজনীতি করে এই দেশে জনগণের রায় পাওয়া সম্ভব না। আগুন সন্ত্রাস ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না এটা এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ তাই প্রমাণ করেছে। আমরা বিএনপিকে বলবো, সত্য মেনে নিয়ে রাজনীতি করুন, গণতন্ত্রের মৌলিকনীতি অনুসরণ করুন, সংবিধান বিবর্জিত রাজনীতি পরিহার করুন। নতুবা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে আপনাদের নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের সেবাই করাই আওয়ামী লীগের কাজ। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। শেখ হাসিনার ম্যাজিক হলো জনগণের প্রতি ভালোবাসা। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রæতির অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকবো। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিবো।
আমাদের আছেন শেখ হাসিনা, তাই আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবেই। তিনিই পেরেছিলেন, তিনিই পারবেন বলেও মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ দেশের আইনশৃংখলাবাহিনী, অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সকল ভোটার জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদেরও তাদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা এ নির্বাচনে বিজয়ী এবং পরাজিত সকল প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীদেরকে সকল প্রকার সহিংসতা ও উস্কানী পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক চাপা শামসুন্নাহার, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরায়জী, আনোয়ার হোসেন, ইসহাক আলী পান্না,সাঈদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর প্রমুখ।