মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে, এই বিজয় জনগণের : শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সংসদ নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এই বিজয় জনগণের বিজয়।
সোমবার বিকালে গণভবনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আটবার নির্বাচন করেছি। এবার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হতে পারে। আমরা সরকারে এসে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বেঁচে যাই। ছয় বছর আমরা রিফিউজি ছিলাম। খুব কষ্টকর জীবন ছিল।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা নারী ধর্ষণ করেছিল, লুটপাট করেছিল,অগ্নিসংযোগ করেছিল, স্বাধীনতার পর তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। যখন আমার মা-বাবার খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। আমার আসার একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার চলার পথটা এত সহজ ছিল না, অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমি মুখোমুখি মৃত্যুকে দেখি, কখনও গুলি, কখনও বোমা হামলা, কখনও গাড়িতে হামলা। আমি যখন শান্তি র্যালি করছিলাম তখন গ্রেনেড হামলা করা হয়। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করে মানবঢাল রচনা করে। অনেকে জীবন দেয়। জনগণের কথা বলতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বন্দি হয়েছি। তারপরও আমি দমে যাইনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিই। আমি খুব আনন্দিত। এবারের নির্বাচন ছিল ব্যতিক্রমী। সাধারণত দলগুলো প্রার্থী দেয়। এবার আমি প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিই। একটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, কারণ তারা কখনো অংশ নিতে চায় না। যারা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি হয়, তাদের জনসমর্থন থাকে না। নির্বাচনকে তারা ভয় পায়।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছেন এবং অন্য দলগুলো থেকেও নির্বাচিত হয়েছেন, দেশের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ বিজয় আমার বিজয় নয়, আমি মনে করি এটি জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের যে অধিকারটা আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা তাদের হাতে, যেটি আমার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, জনগণের ভোটের অধিকার, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।
গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণ ফলাফল আসলে গেজেট হবে তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্ধারণ করবেন। মেজরটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন সংসদীয় দলের নেতা, তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, সেই অনুযায়ী করতে চাচ্ছি।
এর আগে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা ভোটগ্রহণ হয়। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯টি আসনে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জিতেছে। এছাড়া ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।