জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শেখ মুজিব: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল এ দেশের মানুষ। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।
বুধবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে; সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এদেশে অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচের বাস করত। একবেলা খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল তাকে।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সেই সব বিষয়ে তিনি ভাষণেই উল্লেখ করেছিলেন। যে ভাষণ তিনি এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছিল তাকে। এমনকি একটি পত্রিকাও তার জন্য রাখা হয়নি। তার ফাঁসির হুকুম হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন তিনি। দেশে পা রেখেই ছুটে যান বাংলার জনগণের সামনে। ১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ সেটা তিনি তুলে ধরেছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৪ সালের মতো এবারও ধ্বংসাত্মক কাজ শুরু করেছে। ভোট বর্জনের জন্য লিফলেটও বিতরণ করেছে। আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু জনগণ শত বাধা বিপত্তি ও অগ্নিসন্ত্রাস এবং ভয়ভীতি মোকাবিলা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, আজ আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের ধারা আছে বলে মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। সবদিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ও বাইরের কিছু দালাল শ্রেণির লোক আছে, আমাদের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। মনে হয়, অনির্বাচিত কেউ এলে তাদের ভালো লাগে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা ভোট দিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়েছে।
জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ফিরে আসি ’৮১ সালে এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, ক্ষমতায় বসায়। একদিকে খুনি আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী, তারা ক্ষমতায়। সে সময় আমি দেশে ফিরে আসি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি। আজ এতটুকু বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। মানুষের জন্য নানান উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ’৭৬ থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু আয় বাড়েনি। মানুষের পরনে কাপড় ছিল না। বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার সব কেড়ে নিয়েছে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করে।