নতুন মন্ত্রিসভার শপথ সন্ধ্যায়
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভা সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ৩৬ সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ঘোষিত ফলাফলে ২২২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে শপথ নিয়েছেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। বুধবার সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন যারা
বর্তমান মন্ত্রিসভার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১), ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২), শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯) এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট) নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় নেই এমন সংসদ সদস্যদের মধ্যে মন্ত্রী হচ্ছেন- মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), আব্দুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩) ও নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬)। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হচ্ছেন সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন যারা
বর্তমান মন্ত্রিসভার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫) নতুন মন্ত্রিসভায়ও প্রতিমন্ত্রী থাকছেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় নেই এমন সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিমিন হোসেন (রিমি) (গাজীপুর-৪), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২) এবং আহসানুল ইসলাম (টিটু) (টাঙ্গাইল-৬) নতুন মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সন্ধ্যায় শপথ নেবেন।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের ৯ ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।