সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হবে দুর্নীতি ও কলুষিত মুক্ত: দীপু মনি
দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন-আদর্শ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও কলুষিত মুক্ত করার আত্মপ্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মধুমতি হলরুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা-কর্মচারীদের সাথে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
দীপু মনি বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি। আমাদের বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। সমাজের যে শক্তি ও ঐতিহ্য আছে তা জাগ্রত করতে হবে। মানুষের যত কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মহত্ত্বের কাজ করে যাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ে সবাই মানব কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। আমি বিশ্বাস করি আমরা যারা এই মন্ত্রণালয় থেকে রোজগার করি, পরিবারবর্গ নিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছি তারা যদি আন্তরিক ভাবে নিজের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে যাই, যদি সবাই দুর্নীতি ও কলুষিত মুক্ত থাকি তাহলে সহজেই সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব, সম্ভব হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। শুনতে যেন না হয় এই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি আছে। মহত্ত্বের এই কাজে যদি আমরা সবাই নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে কাজ করতে পারি তাহলে এই মন্ত্রণালয় দুর্নীতি ও কলুষিত মুক্ত হবে, আপনাদের কাছে এটাই আমার একান্ত চাওয়া। সে ক্ষেত্রে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সমাজকল্যাণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা, তার সবসময় ইচ্ছা ছিলো এখানে পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে। তাই ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর তিনি বুঝেছিলেন এই ধরনের দেশ বিভক্তি ও স্বাধীনতায় বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না, কাজে দেবে না। তাই তিনি পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ৭০ এর নির্বাচনের পর পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি বরং পরবর্তীতে আমাদের ওপর ৭১ সালে গণহত্যা চাপিয়ে দিয়েছে। আর আমরা এক রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পেয়েছি। আর সেই কারণেই তিনি আমাদের সংবিধানে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। কিন্তু যার নেতৃত্বে সেই স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা বেশিদিন কাছে পাইনি। ৭১ এর পরাজিত শক্তি ও দেশি-বিদেশি দোসররা তাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। তখন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তার বড় মেয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। তারপর থেকে পিতার স্বপ্ন পূরণে শেখ হাসিনা ৪২ বছরের অধিক সময় ধরে লড়াই সংগ্রাম করে চলেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা, তার সবসময় ইচ্ছা ছিল এখানে পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে। আর সে কারণেই তিনি আমাদের সংবিধানে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনারও সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ, প্রান্তিক মানুষ তাদের নিয়েও তার বিশেষ অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। যার প্রতিফলন হিসেবে এই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ঘিরে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তা দেখতে পাচ্ছি। তবে শুধু এই মন্ত্রণালয় নয়; আরও অনেক মন্ত্রণালয় সমাজের পিছিয়ে মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ এবং প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও প্রান্তিকতা নানা কারণে হয়ে থাকে। প্রান্তিকতা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে নয়; প্রান্তিকতা কখনো ভৌগলিক কারণে কখনো বিশেষ কোনো ভিত্তি বা পেশার কারণে এমনকি সাম্প্রদায়িকতার কারণেও প্রান্তিকতার সৃষ্টি হয়। পুরো বিষয়টি অর্থ্যাৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে কি করে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসা যাবে সেই চিন্তা-ভাবনাগুলো বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা করছেন, আমাদের ইশতেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
দীপু মনি বলেন, অতীতে যারা এই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সাফল্যে-অর্জন অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাব। আমাদেরও লক্ষ্য দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ খায়রুল আলম সেখ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) সৈয়দ মোঃ নুরুল বাসির, অতিরিক্ত পরিচালক বেগম শামসুন্নাহার, উপপরিচালক শাফায়েত হোসেন তালুকদার, অডিট কর্মকর্তা রুবানা ফেরদৌসী, উচ্চমান সহকারী শহিদুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কিছু করার আছে। সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। সমস্যা সব জায়গায় থাকে, উন্নত দেশেও সমস্যা থাকে। আপনারা অবগত আছেন; আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সদ্য উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের দাবি ও প্রস্তাব শুনেছি। জনবল সংকট, শূন্য পদ পূরণ, যথাযথ প্রমোশন, কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্বাচনসহ সকল সমস্যার সমাধান যতদ্রুত সম্ভব সমাধানে চেষ্টা করা হবে। আমি আশা করব আপনারা সবাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নিজের স্বপ্ন হিসেবে নেবেন, বুকে ধারণ করে প্রতিটি কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কেননা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার সাফল্যের উপর নির্ভর করে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তরুণ সমাজকে সহমর্মিতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে পারি, সমাজের যে অন্তর্নিহিত শক্তি অনুধাবন করতে পারি যা হারিয়ে গেছে, তাকে যদি ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে আমাদেরকে অতীত ঐতিহ্যের মতো বিদেশি অনুদান, সরকার কি করে দেবে কি দেবে না সে দিকে আর তাকাতে হবে না।
স্মার্ট নাগরিক মানে স্মার্ট পোশাক ও স্মার্ট চেহারা নয় মন্তব্য করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, স্মার্ট নাগরিক তিনি যিনি সব সময় মানবিক, সহমর্মী, ও অসাম্প্রদায়িক। যিনি সমগ্র সমাধানে সব সময় আগ্রহী, যিনি মনে করে ‘I am the Solution’ তাই আমরা প্রত্যেকে যদি I am the Solution বিষয়টি অনুধাবন করতে পারি এবং নিজের মধ্যে এর প্রতিফলন ঘটাতে পারি তাহলেই কোন সমস্যা থাকে না। কারণ বিশ্ব বাস্তবতায় আমরা এখন অর্থায়ন ও অনুদান চক্রে আবদ্ধ হয়ে সামাজিক অংশগ্রহণ হারিয়ে ফেলেছি। অথচ আমরাই যেসব পারি তা কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তি দেখতে পাই। তখন কেউ কারও অপেক্ষায় বসে থাকে না সবাই একে অপরের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয়।’