গণঅভ্যুত্থান দিবসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আগামীকাল ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার সকাল ৯টায় বকশীবাজারস্থ নবকুমার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শহিদ মতিউর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আগামীকাল ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ‘৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি পিতার ঘোষিত ৬ দফা গণআন্দোলনের আদর্শের ভিত্তিতে প্রগতিশীল সংগ্রামের পথে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১১ দফা দাবি ঘোষণা করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই ১১ দফা দাবির মূল ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা। ৬ দফাভিত্তিক ১১ দফা দাবির মধ্যে ছাত্রসমাজের দাবির পাশাপাশি কৃষক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবিও রয়েছে। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দীদের মুক্তি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ৬ দফা ও পরে ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ছাত্র নেতারা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ) নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। আসাদের শহিদ হওয়ার পর, ২১, ২২ এবং ২৩ জানুয়ারি সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ২৪ জানুয়ারি একটি অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের দিকে পরিচালিত করে।
১৯৬৯ সালের ২৪শে জানুয়ারি পাকিস্তানী সামরিক শাসনের পতনের লক্ষ্যে শাসক গোষ্ঠীর দমন-পীড়ন এবং সন্ধ্যা আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনতা মিছিল বের করে। ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে নবম শ্রেণির নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান ও রুস্তম শহিদ হন। প্রতিবাদে সেদিন সচিবালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় সংগ্রামী জনতা। বিক্ষুব্ধ জনতা আইয়ুব-মোনেম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িঘর এবং তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক ঢাকা সেনানিবাসে নিহত হলে বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা নিহত হলে কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র-জনতা। গণঅভ্যুত্থানের চাপে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালে একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হন। তখন থেকে ২৪শে জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।