আ:লীগ সতর্ক, সহিংসতা করলে একচুল ছাড় নয় বিএনপিকে

ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তার মধ্যে ছিল সংসদ বিলুপ্ত, ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, এবং নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠনের দাবি।গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন অনেক বাধা বিপত্তি আসবে, সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।
২৮ অক্টোবর থেকে একটানা ঢাকা শহরে ব্যাপক তান্ডব ও ধ্বংসলীলা চালায় বিএনপি। বিএনপির শত বাধা-আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২২২ আসন পেয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও অন্য নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি জেলা সদর ও মহানগরে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
কর্মসূচি মোতাবেক আজ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সমন্বয়ে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করবে বিএনপি।
এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে থেকেই রাজপথে সরব আছে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচনের পর নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবার তারা বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের দিনে “শান্তি ও গণতন্ত্র” সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে।
উভয় দলের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা শহরে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মনে আতংক বিরাজ করছে। বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে তারা মন্তব্য করছেন। অনেকেই বলছেন রাজনৈতিক সহিংসতা ঘিরে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে সুস্থ শরীরে ঘরে ফিরতে পারবো কিনা নিশ্চিত না। কারণ বাসে আগুন,রেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মতোও ঘটনা এদেশে ঘটে। যারা এসব নৃশংস ভয়াবহ ঘটনা ঘটায় তারা একবারও ভাবেনা তাদেরও কোন আত্মীয় স্বজন এই হামলার শিকার হতে পারে। খেটে খাওয়া মানুষের দাবী ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো নতুন সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হওয়া উচিৎ। তারা বলছেন দৃশ্যমান উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে এখন দ্রব্যমূল্যের দাম নাগালের মধ্যে চায়।
সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপি- জামায়াত নানা সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। তারা ব্যাপক সহিংসতা চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সহিংসতার পথকে তারা মুক্তি আন্দোলনের পথ হিসেবে বেছে নেয়।
বাসে আগুন,রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলা ,রেলে আগুন দিয়ে শিশুসহ মাকে হত্যা করা,বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা,জাজেস এজলাসে হামলা করা,পুলিশ,আনসার,সাংবাদিক পর্যন্ত নিস্তার পায়নি বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে। এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি কোন বাধা নিষেধ নাই কিন্তু আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার রাজনীতি করলে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি করলে একচুল ছাড় নেই বলেও হুশিয়ারি দেন নেতারা।
নেতারা বলছেন,রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বানচাল করার যত রকম ষড়যন্ত্র করার তারা করেছে এবং জনগণ যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে তাদের নাগরিক অধিকার ভোট প্রদান করতে না পারে সেজন্য জনগণকে নির্বাচনবিমুখ করতে ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে, লিফলেট বিতরণের কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু দেশের বিচক্ষণ নাগরিক বিএনপির এইসব কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদেরকেই বয়কট করে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।
নতুন সরকার গঠনের পরেও বিএনপির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা বিভিন্নভাবে বিদেশি বন্ধুদের দিয়ে বিবৃতি প্রদান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘের মাধ্যমেও তারা বিবৃতি দিয়েছে। গুজবের সাথে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতেও বিএনপি পটু।
ষড়যন্ত্রের গোপন গলি দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায়, তারা ভাবে এই সরকারকে হটিয়ে তাদের প্রভুরা ক্ষমতার মসনদে বিএনপিকে বসিয়ে দেবে। কিন্তু বিএনপি জানেনা আওয়ামী শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রথিত,এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের শক্তি, ক্ষমতার উৎস।
অবৈধ উপায়ে আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় আসেনি। এদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। তার উদাহরণ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা বদল করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত ও পুনরুদ্ধার করেছেন। শেখ হাসিনাই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন যা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ভুক্ত। সুতরাং আওয়ামী লীগকে রাজনীতি শেখাতে হবেনা বিএনপির বলেও মন্তব্য করেছেন নেতারা।
বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করুক কোন বাধা নেই,কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে গরীব মানুষের রুটি রোজগারে বাধা দিলে,আন্দোলনের নামে হরতাল,অবরোধ,বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। এসব ব্যাপারে কোন ছাড় নেই বলে পরিস্কার বক্তব্যে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক ভোগান্তি এদেশে হয়েছে। মানুষকে অনেক কষ্ট বিএনপি জামায়াত এই অবরোধের নামে, আন্দোলনের নামে দিয়েছে। আর এসব অপকর্ম করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন,বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল,ওদের জন্ম হয়েছে উর্দি পরা সামরিক বাহিনীর পকেটে। ওরা দেশের ভালো-মন্দ কি বুঝবে? যাদের দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার বালাই নেই তারা দেশে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে ? ওদের ভাইস চেয়ারম্যান একজন পালাতক আসামি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কোন ধরনের নাশকতা করলে ছাড় দেয়া হবেনা,প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে উপস্থিত থাকবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করতে।
বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কেমন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,বিএনপি-জামায়াত সবসময় ষড়যন্ত্র করে, সহিংসতা করে। দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করে। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। তারা অনেক ধরণের সহিংসতা নির্বাচনের আগে করার চেষ্টা করেছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছেন, মানুষকে পুড়িয়ে মারেছেন, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছে মানুষকে প্রতিহত করার কিন্তু মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। ভবিষ্যতেও তারা যদি এধরনের কোন পরিকল্পনা করে তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদেরকে অতীতে যেভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে ভবিষ্যতেও সেভাবে প্রতিরোধ করা হবে।