দ্বিতীয় বারের মতো পিঠা উৎসবের আয়োজন করলো দক্ষিণ সিটি
টানা দ্বিতীয় বারের মতো পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক)। করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই আয়োজন করা হয়।
আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে নগর ভবনের ফোয়ারা চত্বর সংলগ্ন প্রাঙ্গণে এই আয়োজন করা হয়। করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিকালে এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন।
আয়োজনের উদ্বোধনকালে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “পিঠা উৎসব পুরো বাঙালি জাতিরই অন্যতম একটি উৎসব। বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ধারণ ও লালনের লক্ষ্যে গতবছর হতে আমরা এই পিঠা উৎসব আয়োজন শুরু করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আমরা ২য় বারের মতো আয়োজন করছি। আমরা সারাবছর অনেক কর্মময় দিন অতিবাহিত করি। তাই এই কর্মচাঞ্চল্যের পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতিকে সকলের কাছে উপস্থাপন করতে এই আয়োজন আমরা অব্যাহত রাখব। সংস্কৃতির বড় বিষয়ই হলো উৎসব ও আনন্দ। তাই আজ এখানে সমবেত সকলেই আমরা আনন্দ করব।”
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ সময় কাউন্সিলরবৃন্দ ও তাদের পরিবারবর্গ এবং কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই আয়োজনকে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শিল্প-সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের জন্য পিঠা উৎসব আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রীতির জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করতে হবে। যেমনি জনগণের উন্নয়নের জন্য সারাদিন কাজ করতে হবে তেমনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসা শিল্প-সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তাই, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উচ্ছসিত বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই আয়োজন দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত, গর্বিত। কেননা, এর মাধ্যমে সবাইকে এক সাথে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার যে ঐতিহ্য আছে সেই ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে এ ধরনের মিলনমেলার আয়োজন করায় আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে ধন্যবাদ জানাই।”
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এ ধরনের উদ্যোগের অপরিসীম ভূমিকা উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “পাড়া-মহল্লায় পিঠা উৎসবের মতো নানা ধরনের উৎসব যত বেশি আয়োজন করা যাবে আমরা তত বেশি মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে পারবো। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে আমরা দুই মেয়র মিলে নিয়মিতভাবে মেয়র’স কাপের আয়োজন করছি। এত সুন্দর আয়োজনের জন্য আমি দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে ধন্যবাদ জানাই।”
আয়োজনে যোগ দিয়ে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “পিঠা উৎসব আবহমান বাঙালির ঐতিহ্য। আমাদেরকে বাঁচতে হলে এবং বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে যেতে হলে এই ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই পিঠা উৎসব। এ আয়োজনের জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
পিঠা উৎসবকে মহতী উদ্যোগ অভিহিত করে
ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের এই পিঠা উৎসব অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। এর মাধ্যমে বাঙালির কৃষ্টি, ঐতিহ্য যেমন সারাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা যাবে তেমনি বাংলাদেশ ও বাঙালি ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছেও উপস্থাপন করা যাবে। এর মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।”
ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ পিঠা উৎসব যোগ দিয়ে বলেন, “পিঠা উৎসব আমাদের নিজস্ব উৎসব। এ ধরনের উৎসবগুলোকে যদি আমরা ধারণ করি, লালন করি তবেই আমরা পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।”
উৎসবে অন্যান্যের মধ্যে ঢাদসিক মেয়রের সহধর্মিণী আফরিন তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, সংসদ সদস্যদের মাঝে ঢাকা-৪ আসনের মো. আওলাদ হোসেন, ঢাকা-৫ আসনের মশিউর রহমান মোল্লা সজল, ঢাকা-৭ আসনের মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোট ১৫টি স্টলের মাধ্যমে বাহারি স্বাদের পিঠা দিয়ে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ কাঠাল পিঠা, কুলি পিঠা (ঝাল), সুচি পিঠা (ডিম), বিবি খানা পিঠা, মোর্শেদা পিঠা, চিতই পিঠা(ভিজা), ভাপা পিঠা, পাটি সাপটা, পোয়া পিঠা, মেরু পিঠা (মিস্টি), চুই পিঠা-ডাবের পুডিং, ছড়া পিঠা, মেরু পিঠা (মিস্টি), মিস্টি বাখর খনি, সিদ্ধ পুলি পিঠা, খেজুরের রসের পিঠা, মুগ ডালের পিঠা, মাংসের পিঠা, ইলিশ মাছের পিঠা, চিতই পিঠা, মেরা পিঠা, ডাবের পিঠা, চাপটি পিঠা, নকশি পিঠা, দুধ কলি, চটপটি, তেলের পিঠা, মাল পিঠা, ফুচকা, বাকর খানি, লুচি, চিট রুটি, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, ইরানী কাবাব, ক্রাম চপ, টাকি পুরী/ মুরগী পুরিসহ প্রায় শতাধিক হরেক রকমের পিঠার স্বাদ নেন।
পিঠা উৎসবে নগরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীগণ লোকজ গান পরিবেশন করেন।বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত এই উৎসব চলে।