ড. ইউনূসের মামলায় সরকার কোনো পক্ষ নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেসব শ্রমিক-কর্মচারীরা বঞ্চিত হয়েছে, তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলায় সরকার কোনো পক্ষ নয়। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ১৪টি দেশের নন-রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারের বিষয়ে গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এটি ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছে, নিউজ আকারে নয়। আমাদের দেশের পত্রিকায় যেমন বিবৃতি দেয়া হয়, সেভাবে নয়। এটি বিজ্ঞাপন আকারে দেয়া হয়েছে। এটা একদম স্পষ্ট যে, লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে সেটি ছাপানো হয়েছে। এরকম বিজ্ঞাপন আগেও ছাপানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ বলে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বিচারের সম্মুখীন হয় ও জেলে যায়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলা, সেখানে সরকার কোনো পক্ষ নয়। যেসব শ্রমিক কর্মচারী বঞ্চিত হয়েছে, তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারটা হচ্ছে।’
এর আগে ২রা জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকেই এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন একই আদালত। জামিন পাওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এই দুঃখটা মনে রয়ে গেল।’
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে করা মামলাটির রায় ঘোষণা উপলক্ষে বিজয় নগরের টাপা প্লাজায় স্থাপিত তৃতীয় শ্রম আদালতের সামনে গতকাল বেলা ১১টা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী, পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন ৮৩ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোয়া দুইটার দিকে এজলাসে বসেন বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। রায় ঘোষণার শুরুতেই বিচারক আসামিপক্ষের আগে করা পৃথক দুটি আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে তিনি জানান, ‘রায়টি বড় হবে। এ ফোর সাইজে ৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়। পুরো রায় পড়ছি না।’
বিচারক রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনান। তিনি একপর্যায়ে বলেন, ‘এখানে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিচার হচ্ছে না। ড. ইউনূস, যিনি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, তাঁর বিচার হচ্ছে।’
বিচারক মামলাটির বিস্তারিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। পরে তা সংশোধনের জন্য বিবাদীপক্ষকে ওই বছরের ১ মার্চ চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংশোধনের পর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে এর জবাবে ৯ মার্চ যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তা সন্তোষজনক ছিল না।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শ্রম ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।
এমআর