ওলামা দলে বেআইনিভাবে কমিটি গঠনের অভিযোগ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় দফতরের অনুমোদন ছাড়াই দলটির অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব পদে রদবদল, দুই জন যুগ্ম আহবায়ককে অব্যাহতি প্রদান ও ২২ জনকে যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন পদে থাকা সত্ত্বেও আরেকজনকে সদস্য সচিব দায়িত্ব দেওয়ায় বর্তমানে ওলামা দলে দুই জন সদস্য সচিব। এ নিয়ে ওলামা দলের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান ওলামা দলে যে রদবদল করা হয়েছে তা বেআইনি ও দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে দলের মহাসচিব কমিটি অনুমোদন দিয়ে থাকেন। কিন্তু ওলামা দলের নেতারা কিভাবে রদবদল করলেন তা আমি জানিনা। এধরনের এখতিয়ার তাদের নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওলামা দলের আহবায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক জানান ওলামা দলের সদস্য সচিবকে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলীয় কর্মকান্ডে না পাওয়ায় এমনকি তার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে তার খবর না পাওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। দুই জন যুগ্ম আহবায়কের বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুণ্য পদে ২২জনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে।
ওলমা দলের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জানান, আমি গণমাধ্যমে দেখলাম একজনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মনোনীত করা হয়েছে। এ ধরণের এখতিয়ার তাদের নেই। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা তাঁর নির্দেশক্রমে দলের মহাসচিব কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন। কেন্দ্রীয় কমিটির কাউকে অব্যাহতি বা কাউকে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতাও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া এধরনের রদবদল গঠনতন্ত্র বিরোধী ও বেআইনি।
তিনি নিজেকে ওলামা দলের সদস্য সচিব দাবি করে বলেন, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আমি আছি এবং ছিলাম। দলের নির্বাহী কমিটির কোন সভাও হয়নি। ওলামা দলকে একক কর্তৃত্বে নিতে আহবায়ক বেআইনিভাবে এ কাজ করেছেন। এ বিষয়টি চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারি দলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ মোহা. নেছারুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকটি শূন্য পদে নতুনভাবে পদায়ন করা হয়েছে। তারা হলেন- যুগ্ম আহ্বায়কের শূন্যপদে ক্বারী গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক খায়রুজ্জামান রঞ্জু, মাওলানা আবু বকর চাখারী, মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন, হাফেজ মো. জসিম উদ্দিন, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ আবদুর রহিম, মাওলানা মো. মাসুম বিল্লাহ, হাফেজ মো. নুরুল হক, মাওলানা রফিকুল ইসলাম আসলামী, মাওলানা আব্দুল জব্বার শাকিল, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ কুতুব উদ্দিন, মাওলানা আবু সাঈদ মো. আনোয়ার হোসেন ও মাওলানা শাহাদাত হোসেন সবুজ।
এছাড়াও ওলামা দলের যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা মাহমুদুল হাসান শামীম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা আবু বকর শিবলীকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে ওলামা দলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
উল্লেখ্য গত বছরের ৫ এপ্রিল ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের। এতে অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হককে আহ্বায়ক এবং অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব কর হয় । এছাড়াও ৩৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৩৬ জন সদস্য নিয়ে সর্বমোট ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।