গ্রাফিক নভেল ‘আমার দেখা নয়া চীন’: কল্পনা জগতের সঙ্গী যখন জীবন্ত ইতিহাস
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ‘মুজিব’ গ্রাফিক নভেল ১০ খণ্ডে সফলভাবে প্রকাশের পর এবার বঙ্গবন্ধুর লেখা অপর গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়া চীন’ অবলম্বনে গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করলো সিআরআই।
বাহারি রঙের কার্টুনের মতো ছবি, সঙ্গে বিবরণ। গ্রাফিক নভেল হিসেবে পরিচিত আকর্ষণীয় এই মাধ্যম বিশ্ব জুড়ে শিশু-কিশোরদের কাছে জনপ্রিয়। শুধু শিশু-কিশোর নয়, এর জনপ্রিয়তা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যেই রয়েছে। আর এ কারণেই জনপ্রিয় এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের জাতির পিতার জীবন্ত ইতিহাসকে পাঠকের কল্পনার জগতে ছড়িয়ে দিতে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে গ্রাফিক নভেল।
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র নানা ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রথম এসেছিল ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা জন্মদিনে এই গ্রাফিক নভেল প্রথম প্রকাশ হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সিরিজের সর্বশেষ গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করে সিআরআই।
ইতিহাসের পাতায় মুজিব থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠার গল্প ছিলো গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ জুড়ে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশবের ফুটবল খেলা, তার চশমা নেয়া থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি অনেক ঘটনা স্থান পায়, যা বঙ্গবন্ধুর জীবনীকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে পাঠকদের কাছে। পরবর্তীতে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর কাজ করে যাওয়া, রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ ও আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস স্থান করে নেয় এই গ্রাফিক নভেল জুড়ে। সেখানে ছিলো ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির পিতার আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ও গ্রেফতার হওয়ার কথা এবং সর্বশেষ জাতির মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ মাস জেলে বন্দী থাকার পর শেখ মুজিবুর রহমানের কারামুক্ত হবার কথা।
গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে এ সমস্ত কথা জীবন্ত হয়ে ওঠে। আর সেই জীবন্ত ইতিহাসকে বুঝতে এবার বঙ্গবন্ধুর অপর একটি বই অবলম্বনে গ্রাফিক নভেল ‘আমার দেখা নয়া চীন’ প্রকাশ করেছে সিআরআই। এখানে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু সহ বেশ কয়েকজনের পাসপোর্ট দিতে দেরি করা নিয়ে গ্রাফিক নভেলের আলোচনা শুরু হয়। এরপর কাকতালীয় ভাবে প্লেন লেটের কারণে শেষ পর্যন্ত শান্তি সম্মেলনের জন্য চীনে সফরে যাওয়া এবং সর্বশেষ চীনে পৌঁছানোর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রাফিক নভেলটির কাহিনী এগিয়ে যায়। এর মধ্যে চীনের বঙ্গবন্ধুর দেখা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও খুঁটিনাটি বোঝাপড়া নিয়েও আলোচনা হয় এই গ্রাফিক নভেলে। বিদেশে গিয়েও সেখানে নতুন নতুন সব ব্যবস্থাপনা যা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে তা নিয়ে ভেবেছেন তরুণ মুজিব। শুধু তাই নয়, চীনের সৌন্দর্য ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও ভেবেছিলেন জাতির পিতা। সেই সঙ্গে মাওসেতুং এর হাতে গড়ে ওঠা ‘নয়া চীন’কে নিয়ে তার ভালোলাগার কথাগুলোও ছিলো এই গ্রাফিক নভেলে। এক কথায় বলা যায়, শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় অসাধারণভাবে পাঠক যেনো তার কল্পনার রাজ্যে পৌঁছে যাবেন এই গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চোখে দেখবেন চীনকে।
চলতি বছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে সিআরআই এর সবচাইতে বড় আকর্ষণ গ্রাফিক নভেল ‘আমার দেখা নয়া চীন’। বই মেলার উদ্বোধন শেষে ১ ফেব্রুয়ারি সিআরআই স্টলে এসে এই গ্রাফিক নভেলের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রাফিক নভেলের প্রচ্ছদে ‘শেখ মুজিবুর রহমান: আমার দেখা নয়া চীন’ শিরোনামে যুবক বঙ্গবন্ধুকে দেখা যায় কোর্ট টাই পরা অবস্থায় তার চির পরিচিত চশমা চোখে। আর তার পেছনে চীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি। এই বইয়ে থাকছে ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফর করা তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা যা নিজের নোট খাতায় টুকে নিলেও তখনই পুরোপুরি লিখে উঠতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে লেখার অবসর মেলে ১৯৫৪ সালে, কারাগারে বসে। প্রায় ৬৫ বছর পর ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় বাংলা একাডেমি থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয় এ ভ্রমণকাহিনী।
ভোরের সূর্য দেখে যেমন সারাদিনের উত্তাপ অনুমান করা যায়, ঠিক তেমনি এই গ্রন্থের প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টিরও আভাস দেয় যে একদিন এই তরুণের হাতেই বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভার অর্পিত হবে। এই শেখ মুজিবুর রহমানই একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠবেন।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই গ্রাফিক নভেলের প্রকাশক হিসেবে রয়েছেন সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। গ্রাফিক নভেল চিত্রায়ন করেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী। এর কাহিনী বিন্যাস ও সংলাপে কাজ করেছেন সিদ্দিক আহমেদ এবং প্রজেক্ট কিউরেশন ও সম্পাদনায় ছিলেন শিবু কুমার শীল। বইটি মিলবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত সিআরআই এর স্টল নম্বর ৭৭৮-৭৭৯ তে।