দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের ১২টি স্থায়ী কমিটি গঠন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ১২টি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি সংসদ সম্পর্কিত এবং বাকি ৬টি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটিগুলোর মধ্যে কার্যউপদেষ্টা কমিটি ও সংসদ কমিটি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মনোনয়নে গঠন হয়। অন্যগুলো সংসদ নেতার অনুমতিক্রমে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
কমিটির নাম প্রস্তাবকালে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা ৫০টি কমিটির সবগুলোই নিজে হাতে লিখে তৈরি করে দিয়েছেন। সংসদ চাইলে একদিনেই সবগুলো কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদের দ্বিতীয় বৈঠকের মধ্যে সকল স্থায়ী কমিটি গঠন সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।প্রধানমন্ত্রীর হাতে লেখা কমিটির নামগুলো সংসদের রেকর্ডরুমে সংরক্ষণ করা হবে বলেও স্পিকার জানান।
একাদশ জাতীয় সংসদের মত এবারও সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে। দলটির সংসদ সদস্য ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদকে এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এদিকে সরকারের সাবেক তিন আমলা হয়েছেন তিনটি কমিটির সভাপতি। প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সরকার দলের এমপি সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিক। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব জামালপুর-৫ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ হয়েছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। এছাড়া বেসামিরক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছেন নেত্রকোনা-৪ আসনের সাজ্জাদুল হাসান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন। সাজ্জাদুল হাসান একাদশ সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্য উপদেষ্টা কমিটি
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কার্য উপদেষ্টা কমিটির নাম ঘোষণা করেন। এ কিমিটির সভাপতি- স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজেই। সদস্য হিসাবে রয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৪৪), শামসুল হক টুকু, দীপু মনি, নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (বগুড়া-৪)।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (জাতীয় পার্টি), সদস্য- কুমিল্লা-১ আহম মুস্তাফা কামাল, দিনাজপুর-৫ মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা-২ কামরুল ইসলাম, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ফয়জুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, নওগাঁ-৩ সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামালপুর-১ নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর-৫ আখতারউজ্জামান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এস এ কে একরামুজ্জামান।
সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি
সভাপতি: জামালপুর-৫ আবুল কালাম আজাদ, নেয়াখালী-২ মোরশেদ আলম, নেত্রকোন-২ আশরাফ আলী খান খসরু, কক্সবাজার-১ সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, ফেনী-১ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ, নাটোর-৪ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ও নরসিংহী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান।
অনুমিত হিসাব কমিটি
সভাপতি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, সদস্য- মাদারীপুর-১ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ঢাকা-১ সালমান ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুবউল আলম হানিফ, খুলনা-৪ রশীদুজ্জামান, নরসিংদী-১ মো: নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা-৭ প্রাণ গোপাল দত্ত, রাজশাহী-৫ আব্দুল ওয়াদুদ ও রাজশাহী-৬ শাহরিয়ার আলম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি: সুনামগঞ্জ- ৪ মোহাম্মদ সাদিক, সদস্য- ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (ফরহাদ হোসেন), মাদারীপুর-১ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মাগুরা-২ বীরেন সিদকার, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, চট্টগ্রাম-১২ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ফরিদপুর-২ শাহদাব আকবর, রাজশাহী-৩ আসাদুজ্জামান আসাদ ও গাইবান্ধা-২ শাহ সারোয়ার কবীর।
সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটি
সভাপতি: সুনামগঞ্জ-৫ মহিবুর রহমান মানিক, সদস্য-কুমিল্লা-১১ মুজিবুল হক, চাদঁপুর-৫ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, চাদঁপুর-৪ শফিকুর রহমান, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী ও কুড়িগ্রাম-১ কে এম এম মোস্তাফিজুর রহমান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি: নারায়ণগঞ্জ-১ গোলাম দস্তগীর গাজী, সদস্য ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (জাহাঙ্গীর কবির নানক), ঝিনাইদহ-৪ আনোয়ারুল আজিম আনার, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান, সিরাজগঞ্জ-৫ আব্দুল মোমিন মন্ডল, ঢাকা-১১ ওয়াকিল উদ্দিন, টাঙ্গাইল-৭ খান আহমেদ শুভ, বগুড়া-৬ রাগিবুল আহসান রিপু ও ঝিনাইদহ-২ মো: নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
বেসামিরক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি: নেত্রকোনা-৪ সাজ্জাদুল হাসান, সদস্য ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (মুহম্মদ ফারুক খান), কক্সবাজার-২ আশেকুল্লাহ রফিক, লক্ষ্মীপুর-১ আনোয়ার হোসেন খান, বাগেরহাট-২ শেখ তন্ময়, চট্টগ্রাম-১০ মহিউদ্দিন বাচ্চু, মৌলভীবাজার-২ শফিউল আলম নাদেল ও ঢাকা-১৯ খসরু চৌধুরী।
শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি
সভাপতি: ঝালকাঠী-২ আমির হোসেন আমু। সদস্য হিসাবে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী (নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন), (ঢাকা-১৫) কামাল আহমেদ মজুমদার, মির্জা আজম (জামালপুর-৩), শামীম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৪), আবদুদ ওদুদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৪), মুহিতুর রহমান (ময়মনসিংহ-৪), এবিএম আনিসুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৭)।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি শফিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৪)। সদস্য হিসাবে আছেন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (তাজুল ইসলাম), আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১), সাঈদ খোকন (ঢাকা-৬), ছানোয়ার হোসেন (টাঙ্গাইল-৫), মতিয়ার রহমান (লালমনিরহাট-৩), ইকবাল হোসেন (ময়মনসিংহ-২), রেজাউল হক চৌধুরী (কুষ্টিয়া-১), মোহাম্মদ আলী (নোয়াখালী-৬)।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি
সভাপতি: মাদারীপুর-২ শাজাহান খানকে। সদস্য- ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (সাধন চন্দ্র মজুমদার), মকবুল হোসেন (পাবনা-৩), আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (ভোলা-৪), মোস্তফা আলম (বগুড়া-৭), আবুল কালাম মো. আহসানুল আলম (রংপুর-২), এস এম কামাল হোসেন (খুলনা-৩), এ কে একরামুজ্জামান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১), খান মো. সাইফুল্লাহ আল মেহেদি (বগুড়া-৩)।
সংসদ কমিটি
সভাপতি চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১)। সদস্য হিসাবে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ ইকবালুর রহিম, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, হবিগঞ্জ-৩ আবু জাহির, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, টাঙ্গাইল-৫ ছানোয়ার হোসেন, নেত্রকোনা-৪ সাজ্জাদুল হাসান, পটুয়াখালী-৩ এস এম শাহজাদা ও কুড়িগ্রাম-১ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান।
কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার শেষে স্পিকার বলেন, দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে সকল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংসদ নেতা প্রধামন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শতব্যস্ততার মধ্যেও নিজ হাতে লিখে কমিটিগুলো তৈরি করে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে লেখা এই কমিটি সংসদের রেকর্ডরুমে সংরক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় বৈঠকের মধ্যে সকল স্থায়ী কমিটি গঠন সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
এর আগে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, এবার সংসদে একশত এর উপরে নতুন সদস্য। তারা যাতে সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে- এ কারণে প্রধানমন্ত্রী ৫০টি সংসদীয় কমিটির প্রায় ৬০০ জন সংসদ সদস্যের নাম নিজে হাতে লিখে দিয়েছেন। অনুমতি পেলে একদিনেই সবগুলো কমিটি করে ফেলা সম্ভব। তবে সংসদের অন্যান্য কার্যক্রম বিবেচনা করে আমরা ১৫/২০টি করে কমিটি গঠনের অনুমতি চাচ্ছি। সংসেদর দ্বিতীয় বৈঠকে ৫০টি কমিটি গঠন সংসদের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। তিনি কমিটি সংরক্ষনের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেন।