দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে: সংসদে অর্থমন্ত্রী
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রাথমিক লক্ষণে মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। কিছুদিন পরে পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ডলার সংকটে কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে সম্পর্ক মানিলন্ডারিং- প্রচুর টাকা বিদেশে চলে গেছে। সে কারণে ডলার সংকট আছে। মানি লন্ডারিং দূর করার জন্য দেশে যে পর্যাপ্ত পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয় আছে সেটাকে বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার দরকার। বিশেষ ব্যবস্থায় অতীতেও সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত তা না করার কারণে বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও ডলার সংকট দূর করার জন্য অপ্রদর্শিত আয় কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ সরকার দেবে কি না সেটা জানতে চান সোহরাব উদ্দিন।
জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সম্পূর্ণ জিনিসটি আমরা পর্যালোচনা করছি। শুধু ঢালাও কালোটাকা নয়, গোটা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। প্রাথমিক লক্ষ্য দেখে মনে হচ্ছে আমরা উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি। আরও কিছুদিন গেলে পরিপূর্ণ চিত্র পাব। সেই পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার জন্য অনুরোধ করছি।
নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম তাঁর প্রশ্নে বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে অনেক সরকারি ও বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। সেগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চান তিনি। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ অর্থনীতি পর্যালোচনা চলছে। যার বিভিন্ন ধারা রয়েছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি উন্নতির ছাপ দেখতে পাচ্ছি। আরও উন্নতি করতে পারব। তার পরে ধারণা দিতে পারব।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুর রউফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান দেশে জানুয়ারি,২০২৪ পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১ জন আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে টিআইএন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৯ লাখ ৭০ হাজার, ৪৭১ টাকা। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১। বিপরীতে আয়কর আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ৬৫ লাখ টাকা।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ৫৬ টি প্রকল্প চলমান আছে। তাঁর আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে ২০২৩ সালের নভেম্বর হতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে গত ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে যেখানে জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০২৩ মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ দশমিক ৭০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে এক হাজার ৬২৬ কোটি রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে। এ সময়ে ঘাটতি রয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান বাংলাদেশে মানব সম্পদ উন্নয়নে ২০২৩ সালে জাপান সরকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে। অনুদানের পরিমাণ ৩ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর রিটার্ন পদ্ধতি আরও সহজ করার জন্য নতুন রিটার্ন ফরম, এক পাতার রিটার্ন ফরম চালু করা হয়েছে। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজ করার জন্য টিআরপি (ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেটর) কার্যক্রম চালু করা হবে।
দেশের প্রায় ৮৯ শতাংশ এলাকা ৪ জি’র আওতায়
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশব্যাপী সর্বস্তরের জনগণকে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য চারটি মোবাইল অপারেট টেলিকম সাইট স্থাপনের কার্যক্রমের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে। বর্তমান দেশে মোট অনুযায়ী ৪ জি পপুলেশন কভারেজ ৯৮ দশমিক ৭৯, ২ জি পপুলেশন কভারেজ ৯৯ দশমিক ৬৪ এবং আয়তন অনুযায়ী ৪ জি আওতাভুক্ত এলাকা ৮৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আর ২জি আওতাভুক্ত ৯৬ শতাংশ ৯১ এলাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী মোবাইল অপারেটরের সাইটের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯০৬টি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে ও পরে ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়া হতে অসত্য ও উস্কানিমূলক তথ্য সংশ্লিষ্ট ৯ হাজার ৫৯৮ টি লিংক অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নয়।