ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরে ফুলের রাজ্যে চলছে ব্যস্ততা
তিন দিবস ঘিরে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা ফুলের রাজ্যে এখন চলছে ব্যস্ততা। সামনে বসন্ত, বিশ্ব ভালবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসেই ফুল ছাড়া চলেনা।ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালি-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা নিজেদের ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বছরের মধ্যে এ সময়েই সবচেয়ে বেশি ফুলের ব্যবসা হয়ে থাকে।
মূলত এ তিন দিবস ঘিরে জমে ওঠে গদখালি ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এ সময়ে ফুল গাছের বাড়তি যতœ নেন কৃষক। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকারি বাজারে ফুলের দামও ততো বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুলচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে সামনের এ তিন দিবসে অন্তত একশ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
কাঁকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে এসেছিলেন ফুলের পাইকারি গদখালি বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে সরব ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’ধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়েছেন কৃষক। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দামাদামিতে ব্যস্ত সবাই।
এদিন বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ১০ থেকে ১২ টাকায়। প্রতিপিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১০-১৪ টাকায়, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২২ টাকা, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। তবে কৃষক বলছেন এবছর জারবেরার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অপরিবর্তিত আছে। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ১০০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকায়। মালা গাথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে প্রতি ২০০ফুল ২৫০ টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ৫০০-৬০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০-১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। দুইদিন আগেও যেটা ছিল ১০০ টাকা।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফারুক হোসেন ৩০০ গোলাপ বিক্রির জন্য এনেছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ ফুল তিনি বিক্রি করেছেন ২২শ’ টাকা। তিনি বলেন, ২বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি, এবছর পঁচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।
টাওরা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ৯ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ৮-১০ টাকা গোলাপের দাম ছিল। আজ ২৫ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
পানিসারা গ্রামের সোহান আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন এবছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। জারবেরা ১২-১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী দুই তিনদিনে দাম আরো বাড়বে।
ফুল ব্যবসায়ী রনি আহমেদ বলেন, বাজারে গোলাপের খুবই সংকট। ভালবাসা দিবসের আগের বাজারে ২৫টাকায় ফুল পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে।
আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, গাঁদা ফুলের দাম একটু কম ছিল তবে আজ থেকে দাম উঠতে শুরু করেছে। প্রতি হাজার গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।
টাওরা গ্রামের আক্তারুল ইসলাম বলেন, এবছর পঁচা রোগের কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে এজন্য দাম বেশি।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ অঞ্চলে অন্তত ৬শ’ ৫০হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয়। ফুল উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাত করণসহ ফুল সংশ্লিষ্ট কাজে লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
দেখা গেছে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এ অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১১ ধরণের ধরনের ফুল।
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব, ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাজার সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুল চাষিরা। উৎসব পর্যন্ত গাছে ফুল ধরে রাখতে, পোঁকার আক্রমণ ও পঁচন রোধে তারা বাড়তি পরিচর্যা করছেন।
টাওরা গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাদা ফুল বিক্রি করবো। এজন্য এখন ফুলের পরিচর্যা করছি। বিশেষ করে, ফুল মান ভালো রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি, ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবো।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের নয়ন হোসেন বলেন, ১৮কাঠা জমিতে গোলাপের চাষ করছি। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির জন্য ফুলে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এখন নানা ধরনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে, যাতে ফুল নষ্ট না হয়।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।