মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন

শতাধিক ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ২৬৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গভীর রাতে ঘুমন্ত মানুষের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নারী, শিশুসহ অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে শুধু শরণার্থীশিবিরেই নয়, আরো একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই আগ্রাসী হামলা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের পরিচালিত ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধের ধারাবাহিকতা’ বলে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ফিলিস্তিনের রাফাহর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোতে অনেকেই পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বিকট শব্দে ইসরায়েলি বাহিনীর জঙ্গি বিমান, ট্যাংক ও যুদ্ধজাহাজ একযোগে হামলা চালায় তাদের ওপর। ঘুম ভেঙে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোমা ও গোলায় রক্তাক্ত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় শরণার্থীশিবিরের বহু নিরীহ মানুষ।

বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা রাফাহতে রাতভর দফায় দফায় বিকট শব্দে বোমাবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। শহরের আকাশে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন। তাঁরা এই হামলাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

রাফাহর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া সাইদ আল হামস বলেন, বোমায় তার পরিবারের ৪০ দিন বয়সী এক শিশু মারা গেছে। বিভীষিকাময় রাতের কথা বলতে গিয়ে আবু সুহাইব নামের আরেক ফিলিস্তিনি জানান, পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যেন আমরা নরকের মধ্যে পড়ে গেছি। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। যেন নরক নেমে এসেছে পৃথিবীতে।

আবু আবদুল্লাহ নামের আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, কিভাবে এমন ভয়ের রাতটা পার করেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। ওরা আমার এক ভাইকে হত্যা করেছে। বোমা ও গোলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের বোমায় রাফাহর শবোউরা এলাকায় ইয়াবনা শিবিরের আর-রাহমা মসজিদ ও আল হুদা মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুটি মসজিদে বাস্তুচ্যুত বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ওই এলাকার একটি হাসপাতালের কাছেও ব্যাপক গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা শবোউরা এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই জিম্মিকে উদ্ধার করেছে।

অন্যদিকে রাফাহর কুয়েতস হাসপাতালের পরিচালক সুহাইব আল-হামস বলেছেন, আহত লোকজনে হাসপাতাল ভরে গেছে। অনেকের অবস্থাই গুরুতর। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধও নেই।

উল্লেখ্য, গাজা সিটি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের একটি শহর রাফাহ। মিসর সীমান্তসংলগ্ন এই শহরটি এখন গাজার বাস্তুচ্যুত বিপুলসংখ্যক মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। সেখানে এখন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ রয়েছে। হামাস-ইসরায়েল লড়াই শুরু হওয়ার পর শহরটিতে জনসংখ্যা আগের তুলনায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। লোকারণ্য হয়ে ওঠা শহরটির প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে ১৬ হাজার মানুষ বাস করছে বলে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে। বহু মানুষ গাদাগাদি করে তাঁবু খাটিয়ে সেখানে থাকছে।

শহরের মেয়র জানিয়েছেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের চাহিদার তুলনায় খুব অল্প পরিমাণ ত্রাণ মিলছে। শহরে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষ অনাহারে, রোগশোক নিয়েই বেঁচে থাকার ক্রমাগত লড়াই করে যাচ্ছে।

বিমান হামলার পর গতকাল সোমবার বেশ কিছু পরিবার রাফাহ ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়। এদের একজন আলা মোহাম্মেদ। তিনি জানান, তাঁরা একটি বিভীষিকাময় রাত পার করেছেন। সামনে রাফাহর ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে, তা রবিবার রাতের নারকীয় হামলাতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইসরায়েলি সেনারা যে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী শহরে ঢুকবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। আলা জানান, তারা দেইর আল বালাহ শহরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। যদিও মধ্যগাজার এই শহরটিও ইসরায়েলি হামলার হাত থেকে নিরাপদ নয়।

এমআর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর