বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন

আজ বসন্ত, ভালোবাসার দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৮৪ Time View
Update : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখায় শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়ে, ঝরিয়ে দিয়ে মলিন পাতার রাশি ঋতুরাজ বসন্ত এলো আবার। কবিগুরু লিখেছেন,
‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’

ফাল্গুনের হাওয়া দোল লেগেছে প্রকৃতিতে। নতুনরূপে সেজেছে ঋতুরাজ। দখিনা হাওয়া, মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে উঠেছে। পহেলা ফাল্গুন আজ। আজ শুভ বসন্ত আবগাহন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়’। ইট পাথরের নগরী ঢাকা শহরে হয়তো এমন আবহ দেখতে না পেলেও বাংলার প্রকৃতির মাঝে বসন্তের আমেজ। শহর থেকে একটু দূরে গেলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে লাল আর বাসন্তী রঙের বাতাবরণে। শীতের জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতি নতুন করে নতুন রূপে জেগে উঠেছে।

এ তো গেলো বসন্ত বরণের কথা! রাত পোহালে তো ভালোবাসার দিনও। মন থেকে মনে ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ার দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন ডে।

যদিও ভালোবাসা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আরও এক সপ্তাহ আগেই। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে একে একে সাতটি দিবস পেরিয়ে আসে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনের উদযাপনেই যেন এক সপ্তাহের উতলা মন, হাহাকার, স্বপ্ন, প্রেম, উষ্ণতা পূর্ণতা পায় ভালোবাসা!

আজ লাল আর বাসন্তী রাঙা প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রংকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। সঙ্গে প্রেয় মানুষের হাত, বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাস আর সারাদিন আনন্দযজ্ঞে কাটাবে অনেকের।

বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যাবে না গ্রামীণ জীবনও। বসন্তকে বরণ করে নিতে দেতশের বিভিন্ন প্রান্তে ও জেলা শহরগুলোতে চলছে বিশেষ আয়োজন। সেখঅনে নাচে গানে বসন্ত বরণের পাশাপাশি রয়েছে নানা গ্রামীণ খাবারের সমারোহ।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় পয়লা ফাল্গুন (আজ সোমবার) আয়োজন করা হয়েছে বসন্ত উৎসব। এদিন চারুকলা থেকে শুরু হয়ে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়বে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ্ পার্ক এবং উত্তরার ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে। এটি আয়োজন করছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ।

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। দিনটি উদ্‌যাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ ৩০তম বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে। সকাল সোয়া সাতটার দিকে বরেণ্য যন্ত্রশিল্পী সেতারবাদক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতারে রাগ বসন্ত মুখারী বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।

এরপর নৃত্য ও সংগীতের দল। বরেণ্য শিল্পীদের একক পরিবেশনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশনা রয়েছে। এ ছাড়া বসন্তকথন পর্ব, প্রীতিবন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময় আছে সকালের অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বসন্ত-আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। চারুকলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসে শোভাযাত্রাটি। বসন্তকথন পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ। এ সময় বক্তব্য দেন সহসভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরীসহ অন্যরা।

বিকেলের পর্ব শুরু হবে বেলা সাড়ে তিনটায় বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এ পর্বে শিশু-কিশোর ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশনা, দলীয় সংগীত, আবৃত্তির পাশাপাশি আছে বরেণ্য শিল্পীদের একক পরিবেশনা।

প্রতিবছরের মতো এবারও বেলা সাড়ে তিনটায় একযোগে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ির লেকসংলগ্ন মাঠে বসন্ত উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের উদ্যোগে ‘বসন্ত উৎসব ১৪৩০’-এর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, মতিয়ারের সারেঙ্গি বাদন ও অসিত কুমার দে’র শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আজ সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হতে সকাল ১০টা এবং বিকেল ৪টা হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাসহ একযোগে পুরোনো ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, উত্তরা ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান হবে।

এমআর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর