এক লাখ মোমবাতির আলোয় ভাষা শহিদদের স্মরণ
ভাষাশহিদদের স্মরণ এক লাখ মোমবাতি একসঙ্গে জ্বলে ওঠে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠে (কুড়িরডোব মাঠ)। ‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে নড়াইলে বিশেষ এই মোমবাতি প্রজ্বালন আয়োজন করা হয়েছে।
এই আয়োজন ঘিরে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। মোমবাতি প্রজ্বালনের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন একুশের গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’
এরপর একে একে পরিবেশন করা হয় দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীত। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে প্রায় চার একর খেলার মাঠজুড়ে মোমবাতির শিখায় তৈরি করা হয় নানা আলপনা। বঙ্গবন্ধু ও ভাষাশহিদদের প্রতিকৃতি, বর্ণমালা, শহিদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, শাপলা ফুল, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এবং গ্রামবাংলার নানা কৃষ্টি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় মোমবাতির শিখায়।
এ সময় কলেজের মাঠে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়। দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নান্দনিক এই আয়োজনের কারিগর একুশের আলো পর্ষদ।
১৯৯৮ সাল থেকে কুড়িরডোব মাঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে জানিয়ে পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার বলেন, শুরুতে ছোট পরিসরে আয়োজন করা হতো। গত কয়েক বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতিটি মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি আগ্রাসনমুক্ত থাকুক, আলোকিত থাকুক, এর প্রতীকী হিসেবে আমাদের এই কর্মসূচি।
লাখো মোমবাতি প্রজ্বালনের উদ্বোধন করেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শাহাব উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন খান, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, গোলাম মোর্তজা স্বপন, একুশের আলো পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার, নাট্যব্যক্তিত্ব মিলন কুমার ভট্টাচার্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. শরফুল আলম লিটু প্রমুখ।
আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি ও একুশের আলো পর্ষদের কোষাধ্যক্ষ শামীমূল ইসলাম বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে কুড়িরডোব মাঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রথম বছর জ্বালানো হয়েছিল ১০ হাজার মোমবাতি। এবার প্রজ্বালন করা হয়েছে প্রায় এক লাখ মোমবাতি।
তিনি আরও বলেন, এবারের কর্মসূচি সফল করতে এক মাস ধরে সাংস্কৃতিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকরা নানাভাবে কাজ করছেন। বুধবার সারা দিনে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী মোমবাতি সাজিয়েছেন। এই মোমবাতির আলো পৃথিবীর সমস্ত ভাষা ও সংস্কৃতিকে আলোকিত করবে।