বাঙালির যা কিছু অর্জন-প্রাপ্তি, সব আওয়ামী লীগই দিয়েছে-প্রধানমন্ত্রী
বাঙালির যা কিছু অর্জন-প্রাপ্তি, সব আওয়ামী লীগই দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আর ছাত্রলীগ ৪৮ সালে। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অসহনীয় ভূমিকা রয়েছে। বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি, তা কিন্তু আওয়ামী লীগই দিয়েছে। এটাই হলো বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস করা হয়। সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মার্শাল ল জারি হয়। সে সময় একটি সংবিধান রচনা হয়েছিল। সেখানে কিন্তু উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি বিজাতিও ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুজিব একটি জাতির রূপকার, এই সিনেমা দেখলেও কিন্তু ইতিহাসের অনেক কিছু জানার সুযোগ রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছে। অনেক জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবীর বক্তব্য ছিল তিনি (বঙ্গবন্ধু) আবার ভাষা আন্দোলেন কী ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশের মানুষের কথা বলতে গিয়ে বারবার জেলে গেছেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করা এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত সমস্যা, তাদের কিছুই ভালো লাগে না, কোনো ভালো কাজই তাদের পছন্দ হয় না। জাতির পিতার অবদানকে খাটো করার চেষ্টা হলেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, এদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণের, বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি সেটা কিন্তু একমাত্র আওয়ামী লীগই দিয়েছে এটাই হল বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষের কথা বলতে যেয়েই তো বারবার তিনি জেলে গেছেন। পাকিস্তান নামে যে রাষ্ট্রটা গঠন হয়েছিল সেখানেও কিন্তু এই পূর্ববঙ্গের মানুষের অবদান ছিল। তখনকার মুসলিম লীগ কোন সিট পায়নি যা পেয়েছিল এখানে পেয়েছিল। আর সেটার উপর ভিত্তি করে এই পাকিস্থান সৃষ্টি অথচ আমরা ৫৬ ভাগ ছিলাম বাঙালি অথচ আমাদেরই অধিকার কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র এবং তাদের শাসনভার আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর এরই প্রতিবাদ সেই ৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে শুরু করেন। এবং তখনই তিনি বারবার গ্রেফতার হন। সর্বশেষ যখন গ্রেফতার করে তাকে আর মুক্তি দেয়নি।
৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলেও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। মাত্র দেড় মাস ঐ পার্লামেন্টের আয়ুস্কাল ছিল।পার্লামেন্টে বসতে না বসতেই সময় শেষ,৩০ মার্চ খালেদা জিয়া জনগণের রুদ্ররোষে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল । এটা বোধহয় বিএনপির লোকেরা ভুলে যায়। যে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া তার ক্ষমতা হারিয়েছিল জনগণের আন্দোলনের মুখে।
আবারও তারা ভোট চুরির চেষ্টা করে এক কোটি তেইশ লক্ষ ভূয়া ভোটার দিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে। এমনকি সেই নির্বাচনী ঘোষণা কয়েকজনকে মানে আনকনটেস্টের ঘোষণা দেয়া হয় সেই নির্বাচনও টিকাতে পারিনি কারণ সেই এক কোটি তেইশ লক্ষ ভূয়া ভোটার দিয়ে নিজেদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন করে যখনই নির্বাচন করতে গেছে জনগণ তা মেনে নেয়নি। খালেদা জিয়াকে আবারও সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায় এবং ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়।
বিএনপির সমালোচনা করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন,এখন তারা (বিএনপি) আমাদের আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে সরাবে। ইলেকশনের আগে ইলেকশন করতে দেবেনা। আমরা ইলেকশন করে এসেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭৫ সালের পর থেকে যে কয়টা ইলেকশন হয়েছে তারমধ্য যদি কোন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়ে থাকে তাহলে সেটা ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালের নির্বাচনই হয়েছিল। হাজার চেষ্টা করেও মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দেশে বিদেশে নানা তদবির করেও জনগণকে ঠেকাতে পারেনি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা নতুন ভোটার এবং মহিলা ভোটাররা আরও বেশি মাত্রায় এবার ভোট দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আবার শুনি তাদের বড় বড় কথা আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেবে, তারমধ্যে জামায়াত বিএনপি বুঝলাম কিন্তু আমাদের কিছু বামপন্থী দল আছে। এখন তারাও লাফায়। তারাও আন্দোলন করবে, বিপ্লব করবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, হ্যাঁ আমাকে হত্যা চেষ্টা বারবার করা হয়েছে। কি জানি জনগণ, আমার দলের নেতা-কর্মীরাই আমাকে মানব ঢাল রচনা করে বারবার বাচিঁয়ে দিয়েছে। আমি যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারি তার জন্য অনেক রকম চক্রান্ত হয়েছে। তারপর আসতে আসতে এই পঞ্চম দফায় এসে গেছি। এবং বাংলাদেশটা এই ১৫ বছরে অন্তত বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে গ্রাম পর্যন্ত। একটা আদর্শ নিয়ে না চললে কোন দেশে উন্নতি করা যায়না। আর এই আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি।২১ ফেব্রুয়ারি ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে যে মহান আত্মত্যাগ এদেশের মানুষ করেছে তারই মধ্য দিয়ে আজকে বাংলাদেশ সেই আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এদেশের মানুষকে আরও উন্নত জীবন দিতে চাই। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে আরও উন্নত জীবন যাতে পায় সেই পরিকল্পনা নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ কাজ করে যায়। আর আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে বলেই মানুষের আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করেছে যার ফলে বারবার তারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
কাজেই ২১ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে চলা। এবং আদর্শ নিয়ে চলা। আজকের দিনে সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। আর সেই পরিকল্পনা আমরা তৈরি করেছি। আমরা যা কিছু করি পরিকল্পনা করে সুষ্ঠুভাবে করি, এখানে কোন এডপ বেসিসে কাজ আমরা করিনা। আমাদের আশু করণীয় মধ্যবর্তী এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা একচল্লিশের বাংলাদেশ হবে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ, ডেল্টা প্ল্যান সেটাও আমি করে দিয়েছি। আর আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যা যা ওয়াদা জাতিকে করেছিলাম এবং এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ প্রতি নির্বাচনে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে যা যা ওয়াদা করেছি প্রতিটি ওয়াদাই আমরা পূরণ করেছি। এবং পূরণ করেছি বলেই মানুষ আস্থা বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আমরা ২০১০ থেকে ২০২১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছিলাম এবং ২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি কিভাবে বাংলাদেশ আগামী দিনে এগিয়ে যাবে। আমাদের যারা তরুণ সমাজ তাদেরকে সেইভাবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, এখানে ভোগে নয় ত্যাগেই হচ্ছে সবথেকে বেশি আনন্দ এবং অর্জন। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। আর সেটা শিখিয়েছে আমাদের লাখো শহিদ। সেটা শিখিয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহিদ। সেটা শিখিয়ে দিয়ে গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কাজেই তার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।মবাংলাদেশের আর কেউ পিছনে টানতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তটা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।