বিএনপিকে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ
রমজানেও চলবে আ. লীগ-বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম
থানা, জেলা নেতাদের ঢাকায় তলব করবে আ. লীগ
বিএনপির উদ্যোগে বিভাগ-ভিত্তিক ইফতার কর্মসূচি
পবিত্র রমজান মাস জুড়েই দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে রমজান মাসেও চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপি যেন কোনোভাবেই রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে নিতে না পারে সেজন্যও সতর্ক থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বিশেষ করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের নামে রমজানে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে সেই ব্যাপারে রাজপথে সরব থাকবে আওয়ামী লীগ। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সেভাবেই নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ। আর বিএনপি তাদের এক দফা আন্দোলনে অংশ নেয়া দলীয় নেতাকর্মী ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সম্মানে বিভিন্ন ইফতার মাহফিল আয়োজনের উদ্যোগ নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকাসহ সারা দেশে ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা ও জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী বিতরণ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। যে আয়োজনে থাকছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ। তবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়; সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। এবার গণভবনে নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বরং সেই ইফতার আয়োজন ঘিরে যে অর্থ ব্যয়ের নির্ধারিত বাজেট সেটি সারা দেশের দু:স্থ অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণে ব্যয় করার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি হওয়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ। সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ যে সকল কমিটি রয়েছে তা কিভাবে দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন ও নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা যায় সে বিষয়েও সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) বিএম মোজাম্মেল হক সোনালী বার্তাকে বলেন, পবিত্র রমজান মাসে বরাবরের মতো এবারো বেশকয়েকটি ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। তবে রমজান মাসে ইফতার কর্মসূচির পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশি জোর দেয়া হবে। তিনি বলেন, দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও রমজান মাসের প্রথমদিকেই প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিশেষ করে সারা দেশে যে সকল থানা-জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে তা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ঢাকায় ডেকে এনে যথাযথ দিক-নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, এবারো আওয়ামী লীগ দলীয় উদ্যোগে বিভিন্ন ইফতার পার্টির আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গণভবনে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে যে ইফতারের আয়োজন করে থাকেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি এবার হচ্ছে কিনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রমজান মাসে ইফতার রাজনীতির চিরাচরিত ধারা ভেঙে এবার মাঠে সরব থাকবে আওয়ামী লীগ। কারণ বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচার চালাচ্ছে। যদিও তাদের এই অপপ্রচারে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত নয়। তারপরও আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। তারা সামনের দিনগুলোতে বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে সব অপপ্রচারের জবাব দিতে রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় থাকবে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করেছে বেশিদিন হয়নি, এখনো সরকারবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। কাজেই পবিত্র এই মাসে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনের পরপরই বড় পরিসরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে ইফতার সামগ্রি বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যেতে পারে।
বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন শেষ হলেও সামনে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন। আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪ শতাধিক উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। যদিও এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকছে না। তারপরও নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মীরা যেন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে না জড়ান সেই বিষয়ে সাংগঠনিক নির্দেশনা রমজান মাসেই দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এস্ এম কামাল হোসেন সোনালী বার্তাকে বলেন, দলের সাংগঠনিক কাযক্রম বছরজুড়েই চলমান থাকে। সেক্ষেত্রে রমজান মাসও অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবছর রমজান মাস ঘিরে ইফতারসহ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে আওয়ামী লীগ। তবে এবার এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দলের সভাপতি (শেখ হাসিনা) ও সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) আমাদের যে ধরণের নির্দেশনা দেবেন; আমরা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেভাবেই কাজ করে যাব।
তিনি বলেন, রমজান মাসেও প্রত্যেক বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাকর্মীদের সার্বিক নির্দেশনা দেবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র মতে, রমজান ঘিরে ইফতার কর্মসূচিতে মাঠে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ সম্মান জানাতে চায় বিএনপি। কারামুক্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি ইফতারের আয়োজন করার বিষয়ে ভাবছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ঢাকাসহ সারা দেশে দলটির ১০ সাংগঠনিক বিভাগে হবে ক্রমান্বয়ে এই ইফতারের আয়োজন করা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় ইফতার আয়োজনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। এছাড়া আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দেবে দলটি। গত সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়াও মাঠের কোনো কর্মসূচি দেয়া যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা বলেন তারা। তবে কি কর্মসূচি নেয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, এবারও রমজানে এতিম, আলেম-ওলামা, কূটনীতিক, রাজনীতিক ও পেশাজীবিদের সম্মানে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে বিএনপি। পাশাপাশি সারা দেশের সব সাংগঠনিক জেলাসহ ইউনিটেও ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হবে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনও কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোনালী বার্তাকে বলেন, পবিত্র রমজান মাসে বিএনপি বড় ধরণের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। তবে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে বিএনপি তার চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। দলের নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে চাঙা মনোভাব ধরে রাখতে ইফতার পার্টির আয়োজন করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে দলের যে সকল নেতাকর্মী কারাবরণ করেছেন, জেলখানায় মৃত্যুবরণ করেছেন, পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন রমজান মাসে তাদের পরিবারের পাশে থাকতে ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
সোনালী বার্তা/এসআর