শিক্ষার জায়গাটা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে- শিক্ষামন্ত্রী
গ্র্যাজুয়েট-নন গ্র্যাজুয়েট মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষার জায়গাটা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। আমিই পারি; আমরাই শ্রেষ্ঠ এই ধরণের কৌলিন্য মনমানসিকতা পরিহার করতে হবে। বরং আমাদেরকে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে প্রবেশ ও দক্ষতা প্রয়োগে সুযোগ সৃষ্টির পরিবেশ করে দিতে হবে।
শনিবার ২ মার্চ দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে প্রকৌশলীদের দুইদিন ব্যাপী বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র স্লোগান-বক্তব্যে দিয়ে বর্তমান বৈশ্বিক কর্মচ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব না। নিজেকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা মনোনিবেশ করতে সেইভাবে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। শুধু নেতার পেছনে ঘুরঘুর করলেই হবে না, নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে বিকশিত করতে প্রস্তুতিও নিতে হবে। পরবর্তীতে দায়িত্ব পেলে সেই জ্ঞানকে দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে।
প্রাইভেট ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, সব সেক্টরে ব্যর্থতা-সফলতা আছে। ভালো-মন্দের উপস্থিতি আছে; কাজেই নিজেদের ব্যর্থতাকে সেক্টরের ব্যর্থ বলা যাবে না। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও গুণগতমানের শিক্ষা দিচ্ছে। তাই আমাদের কর্মজ্ঞান ও বৈশ্বিক চাহিদার আলোকে কারিগরি ও বৃক্তিমূলক শিক্ষার কারিকুলাম নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের মাল্টি স্কিল ও বহুমাত্রিক ভাষায় দক্ষতা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র সরকারি চাকুরি নয়, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তা হতে হবে। অন্যকে চাকুরি দেয়ার মনমানসিকতা ধারণ করতে হবে।
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক সংকট মেটাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকট নিরসনে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজে লাগাতে এবং বর্তমান কারিকুলামে যে শিক্ষা দর্শন, অ্যক্টভিটি বেইজড লার্নিং, সেখানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অংশ গ্রহণ বাড়াতে হবে। যেহেতু আমাদের চাহিদা আছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা শিক্ষক হিসেবে গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে আসতে পারেন। আমাদের নতুন কারিকলিাম অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণিত ও বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষক প্রয়োজন। আমরা মনে করছি ৬০ হাজারের মতো গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষকের অভাব রয়েছে। সেখানে আমাদের ডিপ্লোমা পাশ করা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োজিত করতে পারলে শিক্ষক সংকট সমাধান করা সম্ভব হবে। সেটা আমাদের বিবেচনায় আছে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সদের স্নাতক সমমানের মর্যাদা দেয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন একজন এসএসসি পাশ শিক্ষার্থীর বিএসসি (পাস কোর্স) পাশ করতে সময় লাগে ৫ বছর। অন্যদিকে ডিপ্লোমা পাশ করতে সময় লাগে ৪ বছর। সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমা পাশ করা একজন শিক্ষার্থী এক বছর কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তাকে বিএসসি (পাস কোর্স) সমমানের মর্যাদা দেয়া যেতে পারে। সে বিষয়ে অংশীজনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকব, পদ সৃজন হবে; এটা টেকসই উন্নয়ন নয়৷ ভাষা শিখে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে। পদ সৃজন শূন্যতার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেটাও সঠিক নয়। এছাড়াও ডিপ্লোমা সম্পন্ন করাদের ছোট করে দেখে গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে সমাজে যে কৌলীন্য আছে, সেই মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পদোন্নতি ও বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনীতির কথাও বিবেচনায় রেখে এগোতে হবে। এই মুহুর্তে আর্থিক বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
আইডিইবি’র সভাপতি প্রকৌশলী একে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে সংগঠনের জেলা ও সার্ভিস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি সম্মেলন ও বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দেন সংসদ সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: শামসুর রহমান।
রেজওয়ান আহাম্মদ বলেন, আমরা সচরাচর কারিগরি শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য দেখি। বর্তমান বাস্তবতায় কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে সামনে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবহেলা করার সুযোগ নেই দাবি করে এই সংসদ সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রয়োজন আছে। এই ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দ্বারাই বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ১১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে; কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে আমার দৃষ্টিতে মনে হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বেকার তৈরির কারখানা। শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষা নয়, আমরা চাই মান সম্মত কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠুক।