উত্তরাধিকার সূত্রে আমার বিদেশের ব্যবসা রয়েছে – দাবি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর
বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ -ব্যবসা থাকা ও নির্বাচনী হলফনামায় সেসব সম্পদের উল্লেখ না করায় আলোচিত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন যে তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ‘এক টাকার দুর্নীতি হয়েছে প্রমাণ হলে’ তিনি সংসদ সদস্যের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।
নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও হলফনামায় সম্পদের বিবরণ না দেয়ার অভিযোগে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমানে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, মন্ত্রী থাকা অবস্থায় কেউ যদি এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে, তাহলে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেব। মন্ত্রী হিসেবে সরকারি গাড়ি-বাড়ি ব্যবহার করিনি। সেগুলো সব দান করে দিয়েছি।
শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমার ঋণ আছে, চাইলেই আমরা বিদেশ থেকে সব করতে পারি না। কিছু না করেও দুর্নামের ভাগীদার হয়েছি। ব্লুমবার্গ বাধ্য হয়েছে আমাদের সকল ব্যবসার বিস্তারিত তুলে ধরতে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া হলেও ৫০ বছরের ওপরে আমরা বড় ব্যবসায়ী, এটি বারবার প্রমাণিত। বিদেশের ব্যাংকে যে ঋণ আছে, সেটা কেউ দেখল না। বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও অনেক দেশে ব্যবসা আছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহি আছে। ব্যবসা ও রাজনীতি কেউ মিলিয়ে ফেলবেন না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি, পারিবারিকভাবে আমরা ব্যবসায়ী। বেশ কিছু কথা আসছে, হলফনামায় তথ্য লুকানোর কথা। ট্যাক্স রিটার্ন অনুযায়ী হলফনামা দিতে হয়, আমরাও সেভাবেই দিয়েছি।
এ সময় তিনি দাবি করেন, হলফনামায় কোথাও বিদেশী সম্পদের বিষয়ে বলা নেই। সেজন্য বিদেশী সম্পদ হলফনামায় দেখানো হয়নি।
যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টির বেশি সম্পত্তি নিয়ে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশী এ রাজনীতিবিদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।
ব্লুমবার্গের ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ব্রিফিংয়েও উঠে আসে। সেখানে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের সম্পর্কে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আমেরিকা সে বিষয়ে অবগত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এ নিয়ে এবার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান বলেন, দেশ-বিদেশে আমাকে নিয়ে খবর হয়েছে, অনেকে জানতে চেয়েছিলেন কেন এতদিন নীরব ছিলাম। দেশের বাইরে থাকায় একটু দেরিতে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে।
সাইফুজ্জামান বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনেক কাজ করেছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব, গত সংসদের সেরা মন্ত্রণালয় ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। এখানে অনেকে বলেন দুর্নীতির কথা। খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে এত কাজ করতাম না। তিনি বলেন, তার বাংলাদেশের ব্যবসা ও যুক্তরাজ্যের ব্যবসা আলাদাভাবে পরিচালনা করেন এবং দুই দেশেই নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স দেন। এভাবে হলফনামা পূরণ করার পেছনে কোনো ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ ছিল না বলে দাবি করেন মি. চৌধুরী।
ছোটবেলা থেকেই লন্ডন, আমেরিকায় বাড়িঘর ছিল উল্লেখ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেইনি, তাই তাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে ব্যবসায়ীর ক্যারিয়ার আমার বেশি। বাংলাদেশ থেকে টাকা না নিয়েও বাইরে ব্যবসা করা যায়। যদি অতীতে বিদেশে ব্যবসায় ভালো অবস্থান থাকে, সেখান থেকেও ঋণ পাওয়া যায়। সুনামের জন্য দেয়। যে নিউজ ব্লুমবার্গ করেছে, সেটিতে হেডলাইন আর বডিতে মিল নেই।
টিআইবি নির্বাচনের সাতদিন আগে রিপোর্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দাবি করে সাইফুজ্জামান বলেন, অনেকে বলেছে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমি সুবিধা নিয়েছি। করোনায় অনেকের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি অনেকে আবার লাভবানও হয়েছে, ব্যবসা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হলে আমি খুশি হব। আমি কি করেছি না করেছি সেটি বেরিয়ে আসবে।