মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

এডিস মশার প্রকোপ, ডিসিদের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২২৯ Time View
Update : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪

এডিস মশার প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা জানিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সামনে এডিস মশার প্রকোপ বাড়বে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের প্রথম কার্য অধিবেশন শেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত আলোচনার নানা দিক তুলে ধরেন মন্ত্রী। সেখানে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এডিস মশার প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। এর আগে কিন্তু আরবান এরিয়াতে এডিস মশার আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। কারণ গ্রামেও এখন নতুন ভবন, অনেক বাড়িঘর হয়েছে। পানি জমে থাকার সুযোগ আছে। সেজন্য গ্রামাঞ্চলেও কিন্তু এডিস মশার প্রজনন হতে পারে।

তাজুল ইসলাম বলেন, এর আগেও একটি ভার্চুয়াল সভায় জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলাম, যেখানে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবী অনুধাবন করছে যে এডিস মশা মোকাবিলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার বা হাতিয়ার ৯০ শতাংশ সচেতনতা। আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা মেডিটেশন। প্রতি তিন দিনের একদিন জমা পানি ফেলে দিন। এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এডিস মশার প্রজননটা আমরা রোধ করতে পারবো।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে ঢাকা শহরের অবস্থা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আগে যদি আমরা ঢাকার বাইরে এক পারসেন্ট এডিস মশার প্রকোপ দেখতাম, বাকি ৯৯ শতাংশই কিন্তু দেখা যেত ঢাকা শহরে। গত বছর এডিস মশার প্রকোপ ঢাকায় কমে নেমেছে ২০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ঢাকার বাইরে হয়েছে ৮০ শতাংশ। প্রতিদিন আগে যে পরিমাণ আমাদের সন্তান বা মানুষ ঢাকায় আক্রান্ত হতো, এখন তা হচ্ছে ঢাকার বাইরে অর্থাৎ ঢাকার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। এডিস মশা মোকাবিলা করার জন্য আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য টিভিসি প্রচার করেছি, মানুষ সেটা দেখে দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। যে কারণে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কমেছে ও সফলতা এসেছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।

এ ব্যাপারে ডিসিদের কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এই অবস্থাটা জানিয়েছি। তাদের বলা হয়েছে এ ব্যাপারে এখনই ইনিশিয়েটিভ নেওয়ার জন্য। তারা জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছেন। তাছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে যেসব সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে তাতেও গ্রামাঞ্চলের মানুষও সচেতন হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সঠিকভাবে দেখভাল করা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে মন তো ডিসিদের মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ডিসিরা তো তদারকি করবেন। আর রিপোর্ট করবেন। আর কার কী দায়িত্ব সেটা তো বণ্টন করে দেওয়াই আছে। আমরা কিন্তু গত জানুয়ারিতেই সভা করেছি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা ধরে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। গত বুধবারে সভা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তুতিগুলো চলমান। মন্ত্রণালয় তথা সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ, জনসচেতনতায় প্রচারণা দরকার তা করা হচ্ছে।

সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচন কেন্দ্রীক কোনো নির্দেশনা ডিসিদের দেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন তো হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন যেসব সহযোগিতা চায় তা করবো। তবে নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কোনো ইন্টারভেনশন বা ইন্টারফেয়ার নেই। নির্বাচনের ব্যাপারটি মন্ত্রণালয়ের দায?িত্বের অংশ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে পুরো ক্ষমতা দেওয়ার আছে। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসকরা ব্যবস্থা নেবেন, মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে বাড়তি কোনো নির্দেশনা থাকাটা নির্বাচন কমিশনারের জন্য সহায়ক বলে আমি মনে করি না।

ডিসি সম্মেলনে ২৫৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ডিসিরা। বেশিরভাগই হচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কারের ২২টি। পৌরসভা ও উপজেলার যেসব রাস্তা সংস্কার করার বিষয় রয়েছে, ডিসিরা এসব বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেছেন কি না বা আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এসব তো আলোচনায় অনুপস্থিত থাকার কথা নয়। জাতীয়ভাবে একটা লক্ষ্যমাত্র স্থির করা আছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ বানাবো। উন্নত বাংলাদেশ বানাতে হলে তো আমাদের উন্নত রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। ধারাবাহিক, উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে স্পেসিফিক কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে যদি কোনো অসামঞ্জস্য থাকে তবে তা সমাধান করা হবে, এ ব্যাপারে ডিসিদের রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

সমবায়ভিত্তিক কৃষিকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সমবায়ভিত্তিক কৃষি, সমবায়ভিত্তির ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সমবায়ের ব্যাপারে আমরা কাজ করার কথা বলেছি। সমবায় ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি গতিশীল ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে বলেছি।

স্থানীয় জলাশয় ও পানি সংরক্ষণ করার বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, কারণ গত বছর এই আবহাওয়ায় পানি সংকট তৈরি হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী জলাশয়গুলো সংরক্ষণে নির্দেশনা দিয়েছিলেন- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আজও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি নিজে প্রয়োজনে নির্দেশনা দিয়েছি। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি ব্যবহারে আমাদের সঠিক বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যেসব পানির জলাশয় আছে তা সংরক্ষণ করতে হবে। নদী-নালা-খাল-বিল যাতে ভরাট না হয় সেজন্যও উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।

সোনালী বার্তা/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর