বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

কিশোর গ্যাংয়ের জামিনে সুপারিশ করলেও ব্যবস্থা : হারুন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২১৫ Time View
Update : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪

রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান, উত্তরা ও মতিঝিল এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে গত দুদিনে ৭৫ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে বর্তমানে ধনীর সন্তানরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। তারা মারামারিসহ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিশোর গ্যাংবিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চলবে। তাদের জামিনের বিষয়ে কেউ সুপারিশ নিয়ে এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, দুদিনে ৭৫ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বের কারণে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, ইভটিজিং, হুমকি দেওয়া, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের ভয় দেখানো ও বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা পরিস্থিত সৃষ্টি করে। এ কাজগুলো তারা দলবদ্ধ হয়ে করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা নামে প্রভাব বিস্তার করে আসছে তারা।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়োং স্টার, বিগবস, ডিস্কো বয়েজ, বন্ধুমহল, শীল বিষু গ্যাং, পারভেজ গ্রুপ, রুস্তম গ্রুপ, ইয়োং স্টার গ্রুপ, নাইনএমএম গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপ, রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে উজ্জ্বল গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে। তাদের কিছু বড় ভাইয়ের ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এমনকি তারা চুরি-ছিনতাই করে আসছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গত দুই বছরে ৩৪ জন কিশোর নিহত হয়েছে।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, একসময় মনে করতাম ভাসমান ও নি¤œ আয়ের পরিবারের সন্তানরা কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যবিত্ত, ধনীদের আলালের ঘরে দুলালরাও কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের পোশাক, চুলের কাটিং চলাফেরা সবই ভীতিকর। এসব ধনীর সন্তানরা প্রথমে মাদকসেবন, পরে মাদক বিক্রিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারা এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাই আবার কখনো কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে থেকে তারা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের ছত্রচ্ছায়ার অভিযোগ রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুদিন ৭৫ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সবাই কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত থাকার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।

কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান বলেন, এখন যে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এসব কিশোর স্কুলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদকসেবনের মতো উশৃঙ্খল জীবন-যাপন করছে। গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। তবে আমি মনে করি অভিভাকদের উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে তার খোঁজ রাখা। পাশাপাশি মা-বাবার উচিত সন্তানদের সময় দেওয়া। গ্রেফতার করে কিশোর গ্যাং দমন করা যাবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।

কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয় দেওয়া বড় ভাইদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক বড় ভাইয়ের নাম পেয়েছি। এসব নাম তদন্ত করে দেখবো কারা কারা কিশোর গ্যাং সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে আমি মনে করি এসব কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধ করার তথ্যতো কাউন্সিলররা জানেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা কিন্তু বড় বা রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে। কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌরাত্ম্যের কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের কিশোর গ্যাং দমনে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর গ্যাংবিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চলবে। এ বিষয়ে কেউ সুপারিশ নিয়ে এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালী বার্তা/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর