সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সম্পাদক সহ সংখ্যাগরিষ্ট পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের বিজয়
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সিনিয়র অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
সমিতির ১৪টি পদের মধ্যে বিএনপি সমর্থকরা আরও ৩টি কার্যকরী কমিটির সদস্য পদেও জয় লাভ করেছেন। অন্যদিকে দুটি সহ-সভাপতি, দুটি সহ-সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও আরও ৪টি কার্যকরী কমিটির সদস্য পদসহ মোট ১০ পদে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক সাদা প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
শনিবার (১০ মার্চ) রাত সোয়া দেড়টায় সমিতির নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এদিকে ফলাফল ঘোষণার আগে সব পদের ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানিয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির কাছে চিঠি দেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে নানা নাটকীয়তার পর শনিবার বিকাল ৩টা থেকে কঠোর নিরাপত্তায় সুপ্রিম কোর্ট বারের দু-দিন ব্যাপী নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। যে ভবনে ভোট গণনা করা হয় সেখানে প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) মনোনীত প্যানেলের জয়ী প্রার্থীরা হলেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। চারটি কার্য সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন- মো. বেলাল হোসেন, মো. রায়হান রনি, রাশেদুল হক খোকন ও খালেদ মোশাররফ।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) থেকে বিজয়ীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) ও তিনটি সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, সফিকুল ইসলাম এবং ফাতিমা আক্তার জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে, সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর ২৫৩৯ ভোট, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক ৩৩১৯ ভোট, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ৩১৭৪ ভোট ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু ২৯০৩ ভোট, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী ৩০৯৪ ভোট, দুই সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ৩৪৩১ ভোট ও হুমায়ুন কবির পল্লব ৩০০৯ ভোট পেয়েছেন। সাতটি সদস্য পদের মধ্যে সৌমিত্র সরদার রনী ২৬৭৭ ভোট, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া ২৩৫৭ ভোট, রাশেদুল হক খোকন ৩১৮৩ ভোট, মাহমুদা আফরোজ ২৪৯০ ভোট, বেলাল হোসেন শাহীন ২৯২৪ ভোট, খালেদ মোশাররফ রিপন ২৮৮৫ ভোট ও রায়হান রনী ৩০৩৬ ভোট পেয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে, সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ২৬২২ ভোট, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ১৭০২ ভোট, দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ২১৩৪ ভোট ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা ২০৭৬ ভোট, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম ১৮৭৬ ভোট, দুই সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ২২৯৮ ভোট ও মো. আব্দুল করিম ১৮২৩ ভোট পেয়েছেন। সাতটি সদস্য পদের মধ্যে ফাতিমা আক্তার ৩১১৬ ভোট, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি ৩২২১ ভোট, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ২৯২৪ ভোট, মো. রাসেল আহমেদ ২৩৫৩ ভোট, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল ২১০৮ ভোট, মহিউদ্দিন হানিফ ২০৬০ ভোট ও মো. ইব্রাহিম খলিল ২২৪৬ ভোট পেয়েছেন।
উক্ত প্যানেল দুটির বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ ৪৬ ভোট ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ২২৯ ভোট পেয়েছেন।
এছাড়াও সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী ২৬৯ ভোট ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ৬০ ভোট পেয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে স্বতন্ত্রভাবে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম নির্বাচন করে ৪২৭ ভোট পেয়েছেন।
জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শেষে গত ৭ মার্চ রাত থেকে ভোট গণনা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীর সমর্থকদের সঙ্গে নির্বাচন পরিচারণা উপ-কমিটির সদস্যদের মারধর-হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলায় স্বতন্ত্র থেকে সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোাকেট নাহিদ সুলতানা যুথী, বিএনপি প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
গত ৮ মার্চ (শুক্রবার) রাতে মারামারিতে আহত সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাতেই বিএনপির ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীসহ মোট পাঁচ আইনজীবী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ গ্রফতার করা হয় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে।
প্রসঙ্গত, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনায় উপ-কমিটিকে সহযোগিতা করছেন ১৫০ জন আইনজীবী।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইকবাল করিম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির।