বিআরটিসি এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান: তাজুল ইসলাম

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ভালো কিছু করতে গেলে চারপাশ দিয়ে টেনে ধরা হয়। তেমনি বিআরটিসি’র অগ্রযাত্রাকে পিছনে টেনে ধরার লোকও আছে। তবে আমার সাহস হলো আমার মন্ত্রী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়), সচিব ও গণমাধ্যমকর্মীরা। কারণ আমি মনে করি বিআরটিসি আমার নয়; বিআরটিসি আমাদের। প্রতিষ্ঠানটি এখন আর আগের মত নেই। এখন যারা কাজ করবে তারা মূল্যায়িত হবেন। আর যারা কাজ করবেন না তারা মূল্যায়িত হবেন না। আমি আজ চেয়ারম্যান আছি কাল নাও থাকতে পারি। তবে এতোটুকু বলতে পারি, আমি পিছপা হবো না।’
সোমবার দুপুরে মতিঝিল বিআরটিসি ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সব কথা জানান তিনি।
আপনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিআরটিসি যদি আগের চেয়ে নানাভাবে উন্নত দিকে অগ্রসর হয়ে থাকে তাহলে পূর্বে যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি কী অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা কঠিন। তবে আমি শুধু এতোটুকু বলব, ম্যানেজমেন্টের সমস্যা ছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সবাইকে সময়মতো জবাবদিহিতার আওয়ায় নিয়ে আসা হবে। ছাড় দেব না। অবশ্য সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান ঠিক থাকলে হবে না ডিপো ম্যানেজারকেও ঠিক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পরিবহনে দূরপাল্লার বাসগুলোর পাশাপাশি অংশ নেবে ঢাকায় চলাচল করা ৫৫০টি বাস। আমরা গত সপ্তাহে ঈদে উপলক্ষে মিটিং করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ঢাকা শহরে আমাদের ৬০০টি বাস আছে। এখান থেকে ঢাকা শহরের জন্য ৫০টি বাস রেখে বাকি ৫৫০টি বাস ঈদ সার্ভিসে যুক্ত করা হবে। এছাড়া আমাদের বাকি দূরপাল্লার বাসগুলো নিয়মিত চলবে। এবার ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিআরটির পক্ষ থেকে ঈদ ঘিরে নতুন কোনো পরিকল্পনা থাকছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি আকারে দিয়ে দেব। তবে সর্বোচ্চ সার্ভিসটাই দেয়ার চেষ্টা করব।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বহরের গাড়িগুলোর মাত্র ৩৪টি গাড়ি লিজে আছে। আমরা আর গাড়ি লিজে চালাবো না। এটি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। স্বচ্ছতার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। যাত্রা শুরু করেছি; যেতে হবে বহু দূর।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে এক হাজার ৮২৫টি বাসের মধ্যে ৮৮৫টি বাস অনরুট ছিল; ২০২১ সালে এক হাজার ৭৬২টি বাসের মধ্যে এক হাজার ১০৬টি বাস অনরুটি ছিল, ২০২২ সালে এক হাজার ৩৫০টি বাসের মধ্যে এক হাজার ২৩৩টি বাস অনরুটে ছিল এবং ২০২৩ সালে এক হাজার ৩৫০টি বাসের মধ্যে এক হাজার ২৫৩টি বাস অনরুটে ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেন, মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে ১৩টি স্কুল বাস সার্ভিস চলমান আছে। বিআরটিসি বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণ থাকছেই। তাছাড়া নগর পরিবহন বাস সার্ভিস একটি লস প্রজেক্ট; তারপরও আমরা চালাবো। সব রুটে নাই; ৭/৮ টি রুটে বাস চলাচলে ই-টিকিট আছে।
তিনি বলেন, আগের বিআরটিসি আর এখনকার বিআরটিসির কার্যক্রম এক নয়। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে একদিনে ১০ হাজার লোকের ট্রেনিং দেয়া সম্ভব। প্রশিক্ষণ আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ৬ হাজার টাকা দিয়েও যেখানে প্রশিক্ষণের জন্য লোক পাওয়া যেত না সেখানে এখন ৮হাজার টাকা দিয়েও প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিযোগিতা চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়ণ স্বার্থে চেয়ারম্যান পদক চালু করা হয়েছে; এতে করে কাজের অগ্রগতি বেড়েছে। যারা যথাযথভাবে কাজ না করেও সবচেয়ে ভালো ছিলো তাদের একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তাও রয়েছেন। চালু করা হয়েছে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা যা তিন বছর পর পর দেয়া হবে। কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের জন্য শিশু বৃত্তি চালু করা হয়েছে। নিজেরা গাড়ি বাড়ানোর সক্ষমতা যাচাইয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে। আর বিআরটিসি বাস রাজধানীতে রাত ১০টা পযন্ত চালু রাখার বিষয়ে ভেবে দেখা হবে।
সেবার মান বাড়িয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআরটিসি) এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে সড়কে চলাচলকারী বিআরটিসি গাড়িতে শৃঙ্খলা ফেরানো হয়েছে। ফলে ডাবল হয়েছে যাত্রীর সংখ্যা, একই সঙ্গে আয় বেড়েছে দ্বিগুন।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিআরটিসি এক সময় অলাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে লাভের পাশাপাশি সেবা বৃদ্ধির চেষ্টায় আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গত বছর থেকে ২৫ শতাংশ যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে বিআরটিসির বাস গুলোতে। আগে আমরা ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেতন দিয়েছি। তাও আবার চার মাস আগের বকেয়া বেতন। কিন্তু বর্তমানে আমরা ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেতন দিচ্ছি। প্রতি মাসের বেতন প্রতিমাসের ১ তারিখে দিয়ে দিচ্ছি। বেতন বোনাস সবই পরিশোধ করছি। এছাড়া পূর্বের বকেয়া বেতন বোনাসও পরিশোধ করছি। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের নতুন ডিপো লাভজনক ভাবে চলছে, যেখানে অনেক পুরাতন ডিপো এখনও লাভের মুখ দেখেনি।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্মার্ট স্কুল সার্ভিস চালু হতে চলছে ঢাকায়। ইতিমধ্যে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমরা বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু করবো।