গণহত্যা স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণ অপশক্তি সমস্ত আলামত নষ্ট করেছিল- হাছান মাহমুদ

আমাদের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এবং পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণহত্যার সমস্ত আলামত নষ্ট করা হয়েছিল এবং এই গণহত্যাকে অস্বীকার করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার ( ২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর- দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের এই গণহত্যা অনেক আগেই স্বীকৃতি পেতো কিন্তু পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর তারা সমস্ত আলামত নষ্ট করেছিল বিধায় আমাদের গণহত্যায় স্বীকৃতি পায়নি, না হলে অনেক আগেই আমাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতো।
যখন বেগম খালেদা জিয়া বলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদ হয়নি হলেও এক দুই লক্ষ এই ধরণের মিথ্যাচার করে আমাদের ইতিহাস বিকৃত করার কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা যায়নি। খালেদা জিয়া নিজের মুখেই এই গণহত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সেই কারনে আজকে আমাদের দেশের গণহত্যা স্বীকৃতি পায়নি বলেও উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, কেন আজও এই গণহত্যার স্বীকৃতি আমরা পাইনি এর কারণ পচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল সেই পাকিস্থানি প্রেতত্মা খুনি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার সমস্ত ইতিহাসকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করেছিল । তাদের মিথ্যা প্রচারনায় আজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণহত্যার দাবীটা সোচ্চারভাবে তুলতে পারা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীতে অনেক গণহত্য হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছিল, একসাথে এত মানুষের হত্যা এটি বিরল। এবং সেদিন ঘুমন্ত মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল। এক রাতে এতো মানুষের হত্যাকান্ড বিরল। যেটি ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করেছিল এই ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, জিয়াউর রহমান শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল যে শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশে গণহত্যা চলাকালীন সময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থান প্রতিনিধি দলের ডেপুটি লিডায় হয়ে যাকে পাকিস্থানি সামরিক জান্তা জাতিসংঘে পাঠিয়েছিল এবং সেখানে গিয়ে এই শাহ আজিজুর রহমান বক্তৃতা করেছিল পূর্ব পাকিস্থানে কোন গণহত্যা হচ্ছে না। পুর্ব পাকিস্থানে ভারতীয় কিছু চরেরা গন্ডগোল করছে মাত্র। সেই মানুষকে জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল, আর বেগম খালেদা জিয়া যারা দেশটাকেই চায়নি মুক্তিযুদ্ধের শুধু বিরোধীতাই নয় বরং মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে যারা পাকিস্থানিদের সহযোগী হয়ে এই গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যায় যারা অংশগ্রুহণ করেছিল, যারা লাল-সবুজ পাতাকা চায়নি যারা ঐ চাঁদ তারা পতাকার পক্ষে লড়াই করেছিল পাকিস্থানের সহযোগী হয়ে এবং গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল সেই আল বদর বাহিনীর জামায়াত ইসলামের নেতাদেরকে খালেদা জিয়া মন্ত্রী বানিয়েছিল। যে পাতাকা চায়নি সেই পতাকা তাদের গাড়িতে লাগিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, রুয়ান্ডায় দশ লক্ষ লোক হত্যাকান্ডের স্বীকার হয় সেটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। কম্বোডিয়ার গণহত্যায় বাংলাদেশের তুলনায় কম সেটিও গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, ভিয়েতনামের গণহত্যা স্বীকৃতি পেয়েছে, বসনিইয়ায় তিন লক্ষ মানুষের হত্যা সেটিও গনহত্যা স্বীকৃতি পেয়েছে ,আরও অনেক গণহত্যা স্বীকৃতি পেয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন আমাদের দেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি, একটা রোড ম্যাপ ঠিক করেছি আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারণার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে একই সাথে দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত আলামত সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছি। ব্যাপকভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেগুলো উপস্থান করা হবে। মানব ইতিহাসের অন্যতম এই জঘন্য হত্যাকান্ড আন্তজার্তিক এবং জাতিসংঘের স্বীকৃতি এজন্যই প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের গণহত্যা পৃথিবীর কোথাও না হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি আজকে যে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করে সেখানে দেখা যাবে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তাদের সন্তানরা অংশগ্রহণ করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সাথে যুক্ত ছিল সেখানে শান্তি কমিটির অনেক সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। বিএনপি এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে বাংলাদেশের মানুষের সাথে তামাশা করছে । আর মুক্তিযুদ্ধে যে ভারত আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল, এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল, ভারতের সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল আজকে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, আর ভারতীয় পিয়াজ দিয়ে পিয়াজু খায়, ভারতের গরু দিয়ে সেহরি খায় । আর তাদের বউ ভারতীয় শাড়ি পরে সুন্দর করে সাজুগুজু করে তারা জনসভায় যায়। তাদের নেত্রীদের নাম বলে আমি খাটো করতে চাইনা। তাদের শাড়ির খবর নিলে দেখা যাবে তাদের বাক্সে ভারতীয় শাড়ি, তারা কিনা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। এরা আসলে তামাশা করছে দেশের দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর জন্য , বাজার অস্থিশীল করার জন্য ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটু চুপসে গেলেও ষড়যন্ত্র থেমে নাই। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যেভাবে নির্বাচনের আগে আমরা সতর্ক ছিলাম ।