মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

না ফেরার দেশে, যাইবা একদিন ভেসে- কামরুজ্জামান রাব্বি

শেখ সাদী খান / ১৫১০ Time View
Update : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪

মৌলিক গানের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের গান, ‘না ফেরার দেশে যাইবা একদিন ভেসে আর তো ফিরা আইবা না, এ  দুনিয়া থাকার জায়গা না’। এই গানের বাণী, সুর ও ভাব সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে, কাবু করে দেয় যাপিত জীবনে। শুদ্ধ আত্মার একজন বিশুদ্ধ মানুষ হয়ে বাকি জীবন সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান লোকসঙ্গিত শিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি।

প্রায় ৪৫০ মৌলিক গান আছে তার। মৌলিক গানের মধ্যে আলাদা কোনো গান এবং কেন সেই গান এতো ভাল লাগে? কি এর বাণীর গভীরতা জানতে চাইলে রাব্বি বলেন, সব গানই আমার প্রিয় গান। সন্তানকে কখনো আলাদা করা যায় না। তবে সব গানগুলোর মধ্যে একটা গান ভীষণ নাড়া দেয়। এই গানের দর্শন এবং বার্তা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়, জানিয়ে দেয়, বুঝিয়ে দেয়। একটা কঠিন বার্তা দিয়ে যায়। এটাই বাস্তব সত্য, এ  দুনিয়া থাকার জায়গা না।

‘আমি তো ভালা না, ভালো লইয়াই থাইকো’  সিলেটের আঞ্চলিক গান দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন কামরুজ্জামান রাব্বি। সে বছর রাব্বির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে, এই এক গানের মাধ্যমে রাব্বিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেতার-টেলিভিশন, দেশে-বিদেশে সমানতালে মঞ্চে গান পরিবেশন করে চলেছেন সমান তালে। একইসঙ্গে নিজের একক অনেক গানের কাজ চলছে।

কামরুজ্জামান রাব্বি সঙ্গীতের উপর পড়াশোনা করে রাজধানীর একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করছেন।বাবা-মা, স্ত্রী ও ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিন বেশ কেটে যাচ্ছে তার।

সম্প্রতি দৈনিক সোনালী বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন লোকসঙ্গীত শিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি।

সোনালী বার্তা: কেমন আছেন?

রাব্বি: সেই স্বভাবসূলভ স্মিত হাসি দিয়ে খুব ভালো আছি।

সোনালী বার্তা: এই মূহুর্তে কি নিয়ে ব্যস্ততা চলছে?

রাব্বি: সামনে রোজার ঈদ, অনেকগুলো গানের রেকর্ডিং করা। ঈদের কিছু প্রোগ্রাম থাকে যেগুলো আগেই রেকর্ড করে টেলিভিশনগুলো, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি, সেখানে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নিতে হবে, এছাড়া নিজেও  এমফিল করছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সামগ্রিকভাবে এসব কিছু নিয়ে মোটামুটি একটু ব্যস্ত আছি বলা যায়।

সোনালী বার্তা: ঈদে কয়টা মৌলিক গান আসছে?

রাব্বি: মৌলিক গান অনেকগুলো, লায়োনিক মাল্টিমিডিয়া গ্রুপ থেকে আসছে প্রায় ৩০ টার মতো গানে ভয়েস দেয়া হয়েছে। ৩০টা গানের শুটিং শেষ হয়েছে। ঘাসফড়িং-এর ব্যানারে দুইটা গান করা হয়েছে।রমজানকে ঘিরে ছয়টি ইসলামি গানও গেয়েছি। সবকিছু মিলেচার/পাঁচটি গান আসতে পারে।

সোনালী বার্তা: প্রিয় ব্যক্তিত্ব?

রাব্বি: আমার কাছে সবাই প্রিয়, আলাদা করে কারো নাম বলা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একজন রিকশাচালকও অনেক সময় প্রিয় মানুষের তালিকায় চলে আসে তার আচরণের জন্য। এই মূহুর্তে ধানমণ্ডি লেকে যে মানুষটি আরাম করে শুয়ে তার এই আরাম করে শুয়ে থাকতে যদি আমি পারতাম খুবই ভালো লাগতো। এই আরাম করে শুয়ে থাকার জন্যই তিনি আমার কাছে প্রিয়। আলাদা করে নাম বলা মুশকিল।

সোনালী বার্তা: প্রিয় রঙ?

রাব্বি: সবগুলোরই প্রিয়।তন্মধ্যে নীল বেশি ভালো লাগে।

সোনালী বার্তা: প্রিয় খাবার?

রাব্বি: একদম শতভাগ বাঙালিয়ানা খাবার খুব প্রিয়। ডাল-ভাত সে তালিকায় এগিয়ে থাকবে। বিশেষ করে ডাল, ভর্তা, আলুভর্তা, নদীর ছোটমাছ এগুলো বেশি পছন্দের খাবার।

সোনালী বার্তা: কার হাতের রান্না সবচেয়ে প্রিয় মা না কি সহধর্মীনী?

রাব্বি: নিঃসন্দেহে মায়ের হাতের রান্না। তবে ইদানিং ঢাকা শহরে বসবাস করায় মায়ের হাতের রান্না দীর্ঘ কয়েক বছর নিয়মিত তেমন আর খেতে পারিনা। এজন্য স্ত্রীর হাতের রান্নাই এই মূহুর্তে সম্বল, হাসি।

সোনালী বার্তা: পছন্দের পোশাকের তালিকায় এগিয়ে রাখবে কোনটা?

রাব্বি: পছন্দের পোশাক বলতে জিন্সপ্যান্ট, ফতুয়া আবার কখনো পাঞ্জাবি।

সোনালী বার্তা: অনুসরণীয় ব্যক্তি কে?

রাব্বি: আমি সব সময় চেষ্টা করি একজন মানুষ হতে। আর মানুষ হওয়ার জন্য আদর্শ হিসেবে আমি আমার বাবাকেই দেখি। উনাকেই অনুস্মরণীয় ব্যক্তি মেনে থাকি।

সোনালী বার্তা: মন্দ লাগে যা দেখলে এখনো?

রাব্বি: মন্দ লাগা বলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ভিডিও চোখের সামনে আসে, দেখি সন্তান তার পিতা-মাতাকে শারীরিক ভাবে আঘাত করছে সেটা দেখলে শরীরে শিহরণ জাগে, থমকে যায়। মনেমনে ভাবতে থাকি এটা কি করে সম্ভব? এরা কেন করে? এরা কি মানুষ? এছাড়া রাস্তায় সিগন্যাল ছাড়েনি ১০মিনিট আটকে রেখেছে এসব ছোটখাটো বিষয় দেখলে খারাপ লাগে।

সোনালী বার্তা: বাংলাদেশে সঙ্গীতের ভবিষ্যত কি?

রাব্বি: এদেশের সঙ্গীতের ভবিষ্যত কি এ ইপ্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার জন্য খুবই কঠিন। কারণ আমি সঙ্গীতের তেমন কেউ নই। আমি নিজেই এই পথের পথিক, নিজেই শিখছি এখনো।তবে বলতে গেলে বলবো যেভাবে চলছে হয়তো এভাবেই চলে এসেছে,  চলবে। কিন্তু আরেকটু পরিপাটি, আরেকটু গুছিয়ে চললে ভালো হয়। তবে একটা কথা যুক্ত করতে চাই সেটা হলো- স্টেজ জমাতে হবে এই চিন্তা থেকে যেদিন বেরিয়ে আসতে পারবেন শিল্পীরা সেদিন থেকে বাংলাদেশের সঙ্গীত আরও সুন্দর হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি। এখন আমরা প্রত্যেকেই গান তৈরি করছি ভাইরাল হওয়ার জন্য।এই জায়গা গুলোকে নির্দিষ্ট করতে পারলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজে আরও ভালো ভালো গান সৃষ্টি হবে।

সোনালী বার্তা: এ দেশের শিল্পীদের সুবিধা-অসুবিধা কি কি?

রাব্বি: একজন শিল্পীর সুবিধা-অসুবিধা সমানসমান মনেহয়। অনেকেই অসুবিধা বেশি বলে থাকে আবার কেউকেউ সুবিধা বেশি বলে থাকে।তবে আমাদের দেশে যেটা হয় সেটা হচ্ছে ত্যালা মাথায় সবাই তেল দেয়।এটা সবদেশেই আছে, সবখানেই আছে।শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই নয়। যেহেতু ত্যালা মাথায় সবাই তেল দেয় সেজন্য আমাকে সেভাবেই তৈরি করতে হবে। নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে।নিজে যোগ্য হলে সবাই আমার সম্মান করতে বাধ্য হবে। সুতরাং শিল্পীদের সুবিধা-অসুবিধা সমান।

সোনালী বার্তা: জীবনের স্মরণীয় মূহুর্ত কি?

রাব্বি: জীবনের স্মরণীয় দিন বা মূহুর্ত বলতে গেলে বলবো আমি এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলাম। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে দু’বার ফেল করি। তৃতীয় বার পরীক্ষার দেই এবং ফলাফল যে দিন ঘোষণা হবে সে দিন জায়নামাজে বসে কোন সুরা, কোন দোয়া কিছুই পাঠ করিনি, অঝোরে কেঁদেছিলাম, আমি মনে মনে আল্লাহকে বলেছিলাম আল্লাহ আমার জীবনে একটা সুযোগ দাও। আমি পরীক্ষায় পাস করি। ওই দিনের পর থেকে আজ আমি এখানে। সারা জীবন এই দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয় দিন হিসেবে রয়ে যাবে এই সু্যোগটা আল্লাহ আমাকে দিয়েছিলেন।

সোনালী বার্তা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নেয়া কতটা ঝুকিপূর্ণ বা ফলপ্রসু বলে মনে হয়?

রাব্বি: ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে হয়। ফলপ্রসূ বলে মনে হয়না। তবে শতভাগ উভয় ক্ষেত্রে এটা বলা যায়। সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নিলে একটা সময় পরে গিয়ে আর গান পরিবেশনের সক্ষমতা থাকবে না, আমাকে কোথাও আর ডাকবে না। তখন আমি কি দিয়ে চলবো? আমার যখন দিন ভালো ছিল সেই টাকা দিয়ে চলবো? এটা অসম্ভব ব্যাপার। আমি কণ্ঠ  শ্রমিক হিসেবে যা আয় করি সেটা দিয়ে তো আমার অন্য খরচও করতে হয়। সে জন্য একজন সঙ্গীত শিল্পীর গান করার পাশপাশি এমন কিছু করা উচিত যা সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সঙ্গীতের সাথেই থাকতে হবে হতে পারে সেটা সঙ্গীতের শিক্ষকতা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা চাকরির নিশ্চয়তা আছে এমন প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া একজন শিল্পীর যুগের সাথেও তাল মিলিয়ে চলা। ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করা, নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল থাকা উচিত। নিজের গানগুলোকে এখানে রাখলে একটা আয়ের ব্যবস্থা আছে। একটা সময়ে পরে গিয়ে মনে হবে এটা আমার পেনশনের টাকা। শুধুমাত্র গায়ক হিসেবে টিকে থাকা দূরুহ ব্যাপার, ঝুঁকি থাকবেই। যখন কেউ গাইতে ডাকবে না তখন হতাশায় ঘিরে ধরবে।

সোনালী বার্তা: ফেলে আসা কোন স্মৃতি আজও উস্কে দেয়?

রাব্বি: কোনো স্মৃতিই আমাকে উস্কে দেয় না। আমার কাছে মনে হয় জীবনে যা করেছি সবই গুরুত্ব পূর্ণছিল। যদি আমি সেদিন পরীক্ষায় ফেল না করতাম তবে আজকে এখানে আসতে পারতাম না।ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি।

সোনালী বার্তা: জীবনে ফিরে পেতে চাইলে কি চাইবেন?

রাব্বি: জীবনে চাইলে চাইবো যেন বাকি জীবন সৎ ভাবে চলতে পারি। আর যে অপশনগুলোর কথা বললেন এগুলো চাইনা।কারণ প্রতিটি সময়ের আলাদা একটা গুরুত্ব ছিল। শৈশবটা শৈশবে তো, কৈশোরটা কৈশোরের মতো দূরন্ত ছিল। এখন যে ভাবে আছি এটা এখনকার মতো সময়। আমি চাইলেও ফিরে পাবো না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর