সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ধ্রুপদী ভাবনার দারুণ ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ‘মায়া’- সাইমন সাদিক

শেখ সাদী খান / ৩৪২ Time View
Update : শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪

ধ্রুপদী ভাবনার দারুণ ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত মায়া। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কাজের ফসল হচ্ছে মায়া বলে জানিয়েছেন ঢাকাইয়া সিনেমার সুদর্শন নায়ক সাইমন সাদিক।

ঢাকাইয়া সিনামার এই মূহুর্তে সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেতাদের একজন সাইমন সাদিক। যিনি  পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ নিয়েও বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন । এ বছরই মুক্তি পেতে পারে ওয়েব সিরিজ। সঙ্গত কারণে দর্শকের জন্য একটা ঘোরতর ভালোলাগার জন্য ওয়েব সিরিজের পরিচালক ও নাম উল্লেখ করেনি।

সুদর্শন, সুঠাম দেহের অধিকারী,ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানবিক মানুষ সাইমন সাদিক। মন ও মননে যিনি শ্বাশত বাঙালি। সময় পেলে মানসিক প্রশান্তির জন্য এখনো পরিবার নিয়ে ছুট দেন গ্রামের বাড়ি। সন্তানদের নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে ঘুরতে, মাছ ধরতে ভালো লাগে।

সম্প্রতি ‘’ মায়া’’ সিনেমার আদ্যপান্ত জানতে হার্টথ্রুব এই নায়কের মুখোমুখী হয়েছিল দৈনিক সোনালী বার্তা। “মায়া: দ্য লাভ” সিনেমা ত্রিভুজ প্রেমের দারুণ সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে দেশের সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে এবার রমজানের ঈদে।

সোনালী বার্তাঃ মায়া সিনেমার কাজ এবং আদ্যপান্ত নিয়ে কিছু জানতে চাই;

সাইমন সাদিকঃ মায়া সিনেমার পরিচালক জসিমউদ্দিন জাকির। যিনি ভীষণ একজন ইমোশনাল মানুষ এবং তিনি একটা প্রেমের সিনেমা বানানোর জন্য আমাকে প্রথম প্রস্তাব দেন আর সিনেমার পরিচালক হচ্ছে আশিক ভূইয়া। তারা আমাকে ডেকে নেন। কথার মাঝে বিরতি দিয়ে সাদিক বলেন, এই সময়ের প্রযোজকরা শিল্পমনা না, কিন্তু আমার সিনেমার প্রযোজক আমাকে প্রথম দিনেই বলেন, ভাই আমরা সিনেমাটার একটানা শুটিং করবো এবং আমি সিনেমার গল্পটা শুনে রাজি হয়ে যাই। আর যেহেতু মাল্টি কাস্টিং দীর্ঘদিন কাজ করবো বলে মনের মধ্যেও একটা ভাবনা ছিল, প্রস্তুতিও ছিল। তিন বছর আগে শুটিং শুরুর করার আগে আমার বিপরীতে বুবলি, রোশান এবং মিলন আছেন। সব মিলিয়ে একটা দুর্দান্ত মাল্টি কাস্টি করলেন সিনেমার পরিচালক ও শিল্পীরা মিলে । সেখানে আমিও যুক্ত হলাম ভালো পরিচ্ছন্ন সিনেমার জন্য। যাওয়ার পর শুটিং এ অনেক প্রতিবন্ধকতা শিডিউল মেলে তো দেখা যায় আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকেনা, আবহাওয়া ঠিক থাকে তো  বিভিন্ন ক্রাইসিস , সেই জায়গা থেকে প্রায় তিন বছর চলে গেছে। এবার রমজানে ঈদের আগে সিনেমাটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে, মানে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মায়া। গল্পের সঙ্গে নামের এটাসমেন্ট মারাত্মক ,পুরো গল্পে মায়া ছড়ানো আছে। সিনেমার পরিচালক থেকে শুরু করে আমরা অভিনেতারা চেষ্টা করেছি কাজটা সঠিকভাবে করতে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে। এবং উনাকে সহযোগীতা করার মাধ্যমে কাজটা শেষ করার চেষ্টা করেছি। এখন এই ঈদে মায়া মুক্তি পেতে যাচ্ছে আমি খুব আশাবাদি দর্শকের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আরও একটা কথা জানিয়ে রাখি সেটা হল ‘’ মায়া-২’’ আসবে এবং সেটা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। মায়া প্রেমের ছবি, মান-অভিমানের গল্প, প্রেমের টানা-পোড়েন আছে । ধার করা গল্প নিয়ে অনেকেই কাজ করতে চায় করেও কিন্তু মায়া সেসবের চেয়ে ব্যতিক্রম । ধ্রুপদী ভাবনার দারুণ ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে কাজ সেই কাজের ফসল হচ্ছে মায়া।

সোনালী বার্তাঃ বুবলীর সাথে প্রথম সিনেমা রিলিজ কো-আর্টিস্ট হিসেবে কেমন সহযোগিতা মনোভাবাপন্ন তিনি?

সাইমন সাদিকঃ উনি (বুবলী একজন গুণী শিল্পী ) স্ক্রিনে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই উনি দিতে চেষ্টা করেছেন একজন কো-আর্টিস্ট হিসেবে।

সোনালী বার্তাঃ বিগত দিনে কোন ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন কিনা?

সাইমন সাদিকঃ এ বছরই ওয়েবে আমাকে দেখতে পাবে দর্শকরা। কিন্তু কোন প্রডাকশন হাউস, কাজ এসব এই মূহূর্তে বলতে চাইনা। কাজটা শেষ, রিলিজ হবে এ বছরেই, দর্শকদের কৌতুহল থাকুক।

সোনালী বার্তাঃ এ বছর চলচ্চিত্র সমিতির নির্বাচন করছেন কিনা?

সাইমন সাদিকঃ না……………… আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম সেখান থেকে অব্যহতি চেয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি। যদিও বর্তমানকমিটি আমার পদত্যাগ পত্র জমা নেয় নি।তারপরওআমিমানসিকভাবেপ্রস্তুতআমিনির্বাচনকরছিনাএবছর।

সোনালী বার্তাঃ নির্বাচন না করার কোন অভ্যন্তরীণ কারণ আছে কি? মানে পিছিয়ে কেন আসলেন?

সাইমন সাদিকঃ পিছিয়ে আসার কারণ হিসেবে বলতে পারি আমি যেভাবে দেখি আমার সংগঠনের স্বার্থ, শিল্পীদের স্বার্থ দেখি এবং গত দুই বছর আগে যেভাবে ঘোষণা দিয়েছিলাম সেই সফলতার পঞ্চাশ শতাংশের ধারেকাছেই আমরা যেতে পারিনি। শিল্পীদের জন্য কাজ করতে চেয়ে কমিটমেন্ট করেছিলাম সেই কমিটমেন্ট তো আমি রাখতে পারলাম না, কাজ করতে পারলাম না ।আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একা চাইলেই তো  সব পরিবর্তন করে দিতে পারবো না, সেটাও সম্ভব না। সকলের যে সমন্বয় দরকার, যা আমি পাইনি।

নির্বাচনের পরপরই কোর্ট-কাচারি করতে গিয়ে, সকলের সঙ্গে যোগাযোগে বিচ্ছিন্নতা হয়ে যায় এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম সেভাবে  চালানো সম্ভব  হয়নি। যেহেতু শিল্পীদের জন্য যে ওয়াদা করেছিলাম সেখানে আমি লুজার। আমার প্রতি সিনিয়র শিল্পীদের যে আদর স্নেহ ভালোবাসা সেটা আমি পরিপূর্ণ করতে পারিনি। শিল্পীদের স্বার্থ, ইন্ডাসট্রিজের সার্থ, দেশের স্বার্থ আমি সবার আগে দেখবো । যেটা আমার গঠনতন্ত্রে আছে। আমি মানবিক দৃষ্টি থেকে ঐ মানুষটাই যে, রাষ্ট্রের দায় সবার আগে আমার কাছে। যা আমি পারিনি। এবং আমি রাষ্ট্রকে সেভাবেই দেখি । আমি মূল্যায়ন করি যে, পথ দিয়ে  একজন মানুষ হেটে যাচ্ছে তার প্রতিও আমার দ্বায় আছে। যে শিল্পীরা আমাকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করছেন ,আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন যে, সায়মনরা আছে সেখানে অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব , সেখানে দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোন পরিবর্তন হয়না। ২০১৭ সালে ভিনদেশী চলচ্চিত্র নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম যে, কোন ভিনদেশী চলচ্চিত্র আমাদের এখানে আসবে না। কিন্তু সফল হতে পারেনি। বিদেশী সিনেমা মুক্তি হওয়া মানে তো আমাদের সকলের জন্য হুমকি।  অভিনয়টাই আমার পেশা। সেখানে আমার রুটি-রূজি হুমকির মুখে পড়ে। আমার দেশের সিনেমা মুক্তির আগ্রহের চেয়ে ভিনদেশি সিনেমা নিয়ে আগ্রহ বেশি দেখাতে হবে কেন? যেখানে আমার দেশের ছবি মুক্তি দিতে পারবো না, সেই ইন্ডাসট্রিজে , সেই সমিতিতে কেন আমি থাকবো ? গত এক বছর ধরেই আমি মানসিকভাবে ছিলাম না । এবং তিন চার মাসে আগে আমি অব্যহতি চাই সেখান থেকে । শিল্পীদের কল্যাণে কোন কাজে আসতে পারিনি বলেই আমি পদত্যাগ করেছি।

সোনালী বার্তাঃ দর্শক সিনেমামুখী নয় নেতিবাচক কথা প্রচলন আছে আর তবে কি কাহিনী নির্ভর নয় ?

সাইমনঃ মোটেই না, এখন যে সমস্ত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে সবগুলোই গল্প নির্ভর আর অনেক ভালো ভালো সিনেমা শুধুমাত্র প্রচারের অভাবে সেখান থেকে ছিটকে যায়।এখান থেকে শিল্পমনা প্রযোজকের অনেক ঘাটতি আছে। অনেক সময় একটা ভালো একটা গল্প নিলাম, টেকনিশিয়ান নিলাম দুর্দান্ত ছবি হল কিন্ত আমি দর্শক পর্যন্ত পৌছাতে পারলাম না।দর্শক পর্যন্ত পৌঁছাতে যে পরিমান প্রচারণার কৌশল ব্যবহার করা উচিত সেটা ব্যবহার করতে না পারলে শুধু সিনেমা করে আসলে দর্শক নন্দিত হতে পারবে না।

সোনালী বার্তাঃ কৈশোরের ঈদ আনন্দ আর এই বয়সে এসে ঈ্দের আনন্দে পার্থক্য কেমন?

সাইমনঃ আমি সব সময় জীবনকে উপযোগ করি। আমি এখন পর্যন্ত সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে আছি এটাই অনেক বড় শুকরিয়া । আগে আমার বাচ্চাদের মতো আমি চলতাম এখন আমার বাচ্চারা যেটা চায় ঐটাই আমার শৈশব । আমার সন্তানদের মাঝে আমি আমার হারানো শৈশব ফিরে পাই। আমার অনেক অপূর্ণতা ছিল , সীমাবদ্ধতা ছিল কিন্তু সুন্দর এবং পবিত্রতম স্থানে আমার সন্তানদের আমি দেখি। আমার বাচ্চাদের হয়তো অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকবে কিন্তু মানসিক প্রশান্তির অভাব হবেনা। এবং সেভাই ওদের বড় করে তুলছি ওরা মানবিক মানুষ হবে। দেশ ও দশের কল্যাণের জন্য ওদের ব্রত থাকবে। আর যেহেতু বাচ্চাদের মধ্যে আমার শৈশব খুজে পাই সেজন্য আমার কলিজার গ্রাম কিশোরগঞ্জ বারবার ছুটে যাই নিজের আত্মার প্রশান্তির জন্য। যখনই এই ইট-পাথরের দেয়ালে বসবাসরত রঙ্গিন মানুষের সাথে চলতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাব হয়, হাপিয়ে উঠি এদের দুমুখো ভাব দেখে তখনই ছুটে যাই আমার প্রশান্তি নীড়ে ,আমার গ্রামে। সেখানে মানসিক প্রশান্তি আছে, মানসিক অক্সিজেন আছে। গ্রামে গিয়ে আমি নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারি, মাছ ধরতে পারি, চিৎকার করে মনের মাঝে বেজে ওঠা সুরে গান গাইতে পারি, নিরিবিলি চলতে পারি, আড্ডা দিতে পারি।

সোনালী বার্তাঃ জীবনের স্মরণীয় মূহুর্ত কোন্ দিন ?

সাইমনঃ আমার ব্যক্তিগত জীবনে স্মরণীয় মূহুর্ত হল যেদিন আমার প্রথম সন্তান পৃথীবির মুখ দেখলো। সেই দিনের অনুভূতি আমার জীবনের সেরা মূহুর্তের একটা, এরপর দ্বিতীয় সন্তান। যা সব সময় আমার মনে একটা রেখাপাত টেনে দিয়ে যায়। আমি সন্তানের পিতা হলাম। তারা আমার কাছে অনেক স্মরণীয়। আমার উছিলায় তারা দুনিয়ায় এসেছে। আমি আমার সন্তানদের সুশিক্ষায় গড়ে তুলে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। তারা দেশের তরে কাজ করবে। আমরা চার হাত-পায়ের মানুষ আমি চাই আমার সন্তানরা মননে মানুষ হোক।

আর আমার পেশার ক্ষেত্রে স্মরণীয় মূহুর্ত ছিল জাতীয় চলচ্ছিত্র পুরস্কার গ্রহণ। যেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়ে ছিলাম ঐটা আমার জীবনে বিশেষ একটা মূহুর্ত।

সোনালী বার্তা: ফেলে আসা কোন স্মৃতি কি আজও উস্কে দেয়?

সাইমনঃ ফেলে আসা কোন স্মৃতিই আমাকে উস্কে দেয়না । অতীত আমাকে যন্ত্রণা দেয় কম । আমরা বলি বর্তমান, বর্তমান তো নাই, এই যে আমি কথা বলছি এটাও বর্তমান ফুরিয়ে অতীত হয়ে যাচ্ছে। মূহুর্তটা আমরা ধরে রাখতে পারছি না। ভবিষ্যত আমাকে ইশারা করে , শিক্ষা দেয় কাওকে আঘাত করবা না, কাওকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবা না, যদি ভালো না লাগে বুঝানোর চেষ্টা করো, তাও যদি না হয় তবে সরে আসো।

 

 

 

 

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর