বুকটা করে দুরু দুরু -অঙ্কন
নিজের গাওয়া শতাধিক মৌলিক গানের মধ্যে বুকটা করে দুরু দুরু….এই গানটিই প্রিয় গান অঙ্কনের। মিউজিকে ক্যারিয়র শুরুর প্রথম দিকে গাওয়া মৌলিক গানটাই এখন পর্যন্ত গেথে আছে মনের গভীরে।
৬০/৭০ দশকের গানগুলোই এখনো মানুষের মুখ মুখে ফিরে। গানের বাণী,সুরের বৈচিত্র্য,কম্পোজিশন সব কিছু মিলেই একটা গান সৃষ্টি হতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতো। কিন্তু আধুনিক কালে এসে হাটে ঘাটে মাঠে বেসুরো গলার শিল্পীর সংখ্যা কম নেই। এখন যে কেউ চাইলেই প্রযুক্তির ব্যবহার করে শিল্পী হয়ে যাচ্ছে। গান শিক্ষার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না। টাকা আছে এই দাম্ভিকতার জোরেই যাকে তাকে ধরে এনে যাচ্ছেতাই কথার মৌলিক গান হিসেবে বাজারে অথবা ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অসংখ্য এমন রুচিহীন মানুষের গান চোখের সামনে ভেসে ওঠে টেলিভিশন কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে।
এখনকার অধিকাংশ কথিত শিল্পীর ভাইরাল নামক গানে প্রাণ নেই, আবেদন নেই, আবেগের মিশেল নেই। স্বল্প সময়ের মোহাচ্ছন্ন হয়ে আবার ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে আস্তাকুড়ে।
এরপরও যারা দীর্ঘ সাধনা ,শ্রম ,সময় ব্যয় করে এই অসুরদের মাঝে টিকে আছে সঙ্গীতকে আকড়ে ধরে তাদের মধ্যে অঙ্কন লাসমিন অন্যতম একজন।
সঙ্গীতের পাশাপাশি তেমন কিছু করেন না। শৈশব থেকেই অর্থাৎ চাপাইনবাবগঞ্জ থাকাকালীন সময় থেকেই নিয়মিত গানের চর্চার মধ্যে ছিলেন। এর পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার জন্য ঢাকা এলে সখের বসে একটা রিয়েলিটি শো-তে নাম লেখান। ভাগ্য এতোটাই সু-প্রসন্ন হয় যে সেই রিয়েলিটি শো-তে বিজয়ী হয়ে আজ সম্মান এবং খ্যাতি নিয়ে দুর্বার ছুটে চলেছেন সবখানে।
একজন শিল্পী হিসেবে আজীবন মানুষের মনে স্থান করে নিতে হলে নিয়মিত রেওয়াজ-এর বিকল্প কিছু নেই। আর যারা সঙ্গীতটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে শাস্তীয় সঙ্গীত শেখা তো অপরিহার্য। যদিও আমাদের দেশে দুই চারটে গান গেয়ে ভাইরাল নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দর্শকের হাততালি কম পাওয়া যায়না।
আজকাল গানের বাণীর চেয়ে বাদ্যযন্ত্রের অত্যাচার বেশি চলে সঙ্গীতে। মানুষ সঙ্গীতের কিছু না বুঝলেও গানে বাদ্যের নাচানিকুদানি থাকলে আর কিছু চায়না।বলা যায়, এই সময়কালটা ভালো সঙ্গীত সৃষ্টির অকাল চলছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কেউ শিল্পী হয়ে যাচ্ছেন। তবে এসবের সীমা আছে, মন্দ কিছু দীর্ঘদিন টিকেনা।
এই সময়ের ভীষণ জনপ্রিয় লোকগীতি শিল্পী মুখোমুখি হয়েছিলেন সোনালী বার্তার। শোনা যাক তার হৃদয়ের কথাগুলি।
সোনালী বার্তাঃ ঈদে মৌলিক কোন গান আসছে কি?
অঙ্কনঃ ধ্রুব মিউজিকের ব্যানের একটা গান আসছে এবার ঈদে।
সোনালী বার্তাঃ এখন নাকি গানে আবেদন কম কথাটা কতটুকু সত্য?
অঙ্কনঃ এখনো ভালো গান হচ্ছে, যেগুলো অযোগ্য বলে বিবেচিত সেগুলো দিনশেষে কোন আবেদন থাকেনা দর্শকের কাছে।
সোনালী বার্তাঃ বাংলাদেশে সঙ্গীতকে একমাত্র পেশা হিসেবে নেয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন?
অঙ্কনঃ এটা অনিশ্চিত একটা পেশা। সঙ্গীতে একজন শিল্পীর শতভাগ সাফল্য আসলে অনিশ্চিতাটা থাকেনা কিন্তু কিভাবে বুঝবো আমি শতভাগ সফল? আমি নামকরা গায়িকা হয়ে গেছি এটা বলা দূরহ ব্যাপার। সেজন্য সঙ্গীতকেই পেশা হিসেবে না নিয়ে অন্য ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়া উচিত।
সোনালীর বার্তাঃ সঙ্গীতে প্রথম হাতে খড়ি কার কাছে?
অঙ্কনঃ বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান চাপাইনবাবগঞ্জে এবং সে সময় আমার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর ।
সোনালী বার্তাঃ আপনি তো রিয়েলিটি শো-এর মাধ্যমে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ?
অঙ্কনঃ হ্যাঁ আমি চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠের মাধ্যমে ব্যপক পরিচিতি পেয়েছি ।
সোনালী বার্তাঃ নিজের গাওয়া সবচেয়ে পছন্দের গানের কথা বললে কোনটা আগে বলবেন?
অঙ্গনঃ দুটো গান আমার ভীষণ পছন্দের। একটা হচ্ছে ,আমার বুকটা করে দুরু দুরু ,কখন জানি যাই মরে……আরেকটা হল ভ্রমরা শিরোনামে আরেকটি গান এসেছিলো ২০২২ সালের শেষের দিকে সেটাও আমার ভীষণ পছন্দের।
সোনালী বার্তা: অনুসরণীয় ব্যক্তি কে?
অঙ্গন : নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলতে চাইনা। যারা বিগত দিনে এবং এখন ভালো গাইছেন তাদের থেকে কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি এজন্য সবাই আমার কাছে অনুস্মরণীয় ব্যক্তি।
সোনালী বার্তা: মন্দ লাগে যা দেখলে এখনো ?
অঙ্গনঃ সম্পতি যা দেখলে খুব খারাপ লাগে তা হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন দেখি কেউ পশু হত্যা করছে, দ্বিতীয় হচ্ছে বুলিং, কোন সেলিব্রেটি মারা গেলে বিশ্রীভাবে বুলিং করা হয় ফেসবুকে । এটার ঘোর বিরোধিতা করি । আমি প্রত্যাশা করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বুলিংটা কন্ট্রোল করা উচিত। ম্যাক্সিমাম মানুষের ভূয়া আইডি এবং সেখান থেকেই এগুলো করা হয়। আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাইনা। সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই।
সোনালী বার্তা: বাংলাদেশে সঙ্গীতের ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?
অঙ্গন: এদেশের সঙ্গীতের ভবিষ্যত নিয়ে বলতে গেলে বলবো, বিগত দশ–বারো বছর সঙ্গীতের তেমন উন্নতি ঘটেনি, একটা ধোয়াশা চলছে। তবে আশা করা যায় আগামী দশ-বারো বছর পর এদেশের সঙ্গীতাঙ্গন আবার তার রূপে ফিরবে।
সোনালী বার্তা: জীবনের স্মরণীয় মূহুর্ত কবে যে দিনটার কথা ভাবলে আজও নস্টালজিক হয়ে যান?
অঙ্কন: স্মরণীয় মূহুর্ত অনেক আছে,সঙ্গীতে পথচলা খুব ছোট থেকেই। সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেটা ছিল ২০১০ সালে। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। এটা আলাদা হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে, অনেক প্রতিযোগী ছিল সারা দেশ থেকে। আমি সকলের মধ্য থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলাম।
সোনালী বার্তা: ফেলে আসা কোন স্মৃতি আজও উস্কে দেয়?
অঙ্গন: ছোটবেলাতে অনেক স্বপ্ন দেখেছি এখন এই সময়ে এসে সেই স্বপ্নের সোনার দিন পার করছি । সাধনা করেছি , সেই পথের এখন আমি যাত্রী। এজন্য শৈশবে সঙ্গীতের প্রতি শ্রম, সাধনা করে যাওয়াটাই আমার কাছে উস্কে দেয়া মনে হয়। তবে এটা ভাল দিক।
সোনালী বার্তা: শিল্পীরও একজন পছন্দের শিল্পী থাকে সে তালিকায় কাকে এগিয়ে রাখবেন এপার-ওপার দুই বাংলা মিলে ?
অঙ্গনঃ রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, হৈমন্তী শুক্লা, শুভমিতা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং মান্না-দে ।