মায়ের জন্মদিনে মাকে চিঠি লিখলেন চয়নিকা চৌধুরী
মায়ের জন্মদিনে মাকে নিয়ে দীর্ঘ এক চিঠি লিখেছেন বিশিষ্ট নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী তার ফেসবুকের পাতায়।
মাকে নিয়ে আবেগঘন কথাগুলো ছিলো এরকম…….
আমার মা,
আমার দিদা সরযূ বালা ভদ্র এর আদরের মেয়ে শিশির কণা ভদ্র। যার জন্য আমি প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তার এই সুন্দর সকাল দেখতে পেয়েছি। যার জন্য আমার প্রতিদিন ঘুম ভাঙে,সৃষ্টিকর্তার অপার সৃষ্টি এই মা।আজ তার জন্যই আমার এত সব।
একমাত্র মায়ের ভালবাসাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আর স্বার্থহীন ভালবাসা। কিন্ত মা শব্দটা খুব ছোট। মায়ের ভালোবাসার কোন তুলনা হয়না।
তাকে ভালবাসি। ভয়ও পাই।
সম্মান করি। কারণ, সবসময় মাথায় থাকে মাকে অসম্মান করলে উপরে যিঁনি আছেন তিঁনি তা পছন্দ করবেন না।
তিনি অনেক নীতিবান মানুষ। পুরানো ঢাকার নাম করা স্কুল সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারস এর কড়া টিচার ছিলেন ক্লাশ নাইন/ টেন এর। কখনো মিথ্যা বা ভুল বলতে দেখিনি। শুনিনি। এখনো না।
তখনকার সময়ে ১৯৬৮ সালের তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ। তার কাছ থেকেই আমার যা কিছু অর্জন। আমার যা কিছু ভালো, যদি ভালো কিছু থেকে থাকে, তার কাছ থেকেই পাওয়া। মানুষের জন্যে করা, পাশে থাকা,সবার কাছে বড় করা, পরিশ্রম করা। তার একটাই কথা। তিনি কখনও কোনদিন অপরকে দোষ দিতেন না। কখনই না। আমাদের শাসন করতেন। কিন্তু তা প্রকাশ্যে না।
মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন। ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠতেন। রান্না করতেন নিজ হাতে। অনেক সময় সচেতন জ্ঞান তার। এই বয়সে এসেও তিনি আমার বাবাকে রান্না করে খাওয়ান। তিনি উপহার পছন্দ করেন বই আর ফুল। এখনো তিনি প্রতিদিন বই পড়েন।
মায়ের আর কিছু না পাই, তার কিছু গুণ আমি পেয়েছি। খুব ভোরে ওঠা, নিজ হাতে রান্না করা। ভালো কাজের প্রশংসা করা। আমার মা অনেক অভিমানী।
অভিমান হলে পুষে রাখেন। প্রকাশ করেন না। ভালবাসাতেও প্রকাশ কম। তার সাথে আমার এই এক জায়গাতেই অমিল। ভালবাসা বা কাছের মানুষের সাথে আমি কিছু লুকিয়ে রাখিনা। আর ভালোবাসি কথাটা আমি অনেকবার বলতে আর শুনতে ভালবাসি। আমার ধারনা তাতে কনফিডেন্ট বাড়ে, মন বড় হয়। কিন্তু আমার মা একদমই উল্টা।
আজ আমার মায়ের জন্মদিন।
আপনারা সবাই আমার মায়ের জন্য প্রার্থনা করবেন। প্লিজ। আর আমার যেন তার আগে মৃত্যু হয়।
মামনি, তোমাকে অনেক ভালবাসি। অনেক। অনেক কিছু ইচ্ছা থাকা সত্বেও করা হয়ে ওঠেনা। কিন্ত প্রতি মুহূর্তে আমি তোমাকেই ভাবি, মনে করি। যখন আমার জ্বর হয়, মাথা ব্যথা হয়, দাঁত ব্যাথা করে, মাইগ্রেন হয়, তোমাকে মনে পড়ে। কত রাত তুমি না ঘুমিয়ে আমার যত্ন করেছো!! নিজে ভালো কিছু না খেয়ে আমাদের জন্য এনেছো!! কখনও অভাব বুঝতে দাওনি। ছুটির দিন গুলিতেও রেষ্ট করোনি। আমাকে ছায়ানটে পাঠিয়েছো।
আজ সব মনে পড়ছে মা। তুমি অনেক ভালো থেকো। সুস্হ থেকো মা। তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসি মামনি।
শুভ জন্মদিন। তোমার জন্য প্রার্থনা সব সময় মা।
তোমার চয়ন।
চয়নিকা চৌধুরী