নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে চলছে – কাদের
নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকার পরেও ভোটার উপস্থিতি সন্তানজনক থাকার পরেও অবিরাম আমাদের নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি একটা চক্র অপপ্রচার, মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহিত করতে প্রচারণামূলক প্রচারপত্র বিতরণ উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র আছে এবং নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি । চিহ্নিত এই অপশক্তি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্থিতিশীল রাজনীতিক পরিবেশ এবং জনগণের ভোটাধিকার নস্যাৎ করতে নির্বাচন বিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত। গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন, নির্বাচন বিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে, আমাদের সকলকে সারা বাংলাদশে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি তার ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। ভাষার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার জন্য গত সাত দশক ধরে আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের নাগরিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি, উন্নত নাগরিক জীবন প্রতিষ্ঠার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের এই স্বাধীন সংগ্রামের বিপরীতে দেশ বিরোধী একটা অপশক্তি লাগাতারভাবে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র বিরোধী সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদী যে অপশক্তি আজকে আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের ভিত্তিমূলে আঘাত করতে চায়, তাদেরকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। দেশ বিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে জনগণকে সামরিক স্বৈরশাসনের জাতাকলে দীর্ঘদিন পিষ্ট করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র হত্যার সূচনা হয়েছিল স্বাধীন এই দেশে।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। আমরা এদেশের সংবিধান এদেশের গণতন্ত্র, সাংবিধানিক অধিকার, আইনের শাসন এর প্রতি যথাযথ আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবো। জনগণের ভোটাধিকার শ্রদ্ধা করি এবং শ্রদ্ধা করে যাবো এটা আমাদের অঙ্গীকার। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি আছে। আমরা এ কথাও স্বীকার করেছি, অতীতে আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে, সেই ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেয়ার সৎ সাহস আওয়ামী লীগের আছে।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে বিএনপি বড় বড় কথা বলে…বিএনপি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশবার হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যাবার পর আমাদের নেতৃত্বস্থানীয় অনেক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এম এস কিবরিয়াসহ আমাদের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া এবং বিএনপির প্রথম সারির কোন নেতার বিরুদ্ধে আজকে রাজনৈতিকভাবে এই ধরনের হত্যাকান্ডের হুমকি ছিলনা সেটা এদেশের জনগণ কারো কাছে অজানা নেই। বিএনপির নেতারা কেউ বলতে পারবে না আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করেছে। হত্যার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করেনা। সেটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বারবার প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ কা্উকে হত্যা করে ক্ষমতার রাজনীতিকে চিরস্থায়ী করতে চায়না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। দেশ বিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলংকিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছিল। এবং সেটাই আমাদের গণতন্ত্রের উপর সবচেয়ে বড় আঘাত। সেই ষড়যন্ত্র খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। তাদের দু:সাহস দিয়েছে তা না হলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মতো দু:সাহস ওদের থাকতো না যদি এর সঙ্গে মোশতাক-জিয়ার মতো লোকেরা জড়িত না থাকতো। এটা আগেও বলেছি আমরা এখনো বলছি। এরপর ৩রা নভেম্বর জেলহত্যা কান্ড ঘটানো হয়েছিল।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, প্রকাশ্যে জঙ্গীবাদি তৎপরতা বাংলা ভাই,সায়খ আব্দুর রহমান জংগিগোষ্ঠী একসাথে ৬৩ জেলায় একসাথে সিরিজ বোমা হামলা চালাই। এগুলো বিএনপি আমলের অপকর্ম। এইসব থেকে দেশকে একটা সুষ্ঠু, সুস্থ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বাধীন এবং কতৃত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বিযুক্ত করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আইনি কাঠামো গঠন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভার নেয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি সমৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান করবো আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন।।আজকের এই উন্নয়ন অগ্রগতি সমৃদ্ধির রূপকার শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে নিশ্চিত করুন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন, আপনার পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিন। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার এলাকার উন্নয়নে সহযোগিতা করুন। শান্তি উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়ে আপনার স্বাধীনতা, বাংলাদেশের বিনির্মাণে আপনারা অংশ নিন।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও জনগণের ক্ষমতায়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সাংবিধানিক ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, এড. কামরুল ইসলাম, ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ড.আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, এড. আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো: আমিনুল ইসলাম আমিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সায়েম খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো: রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।