সংগীতের প্রচার-প্রসারে কলের গানের অবদান অনেক– নাহিদ ইজাহার খান
বড় বড় সঙ্গীত শিল্পীর গান সমাজের উচ্চবিত্ত মহল, রাজা বা জমিদারের জলসাঘর কিংবা দরবারে সীমাবদ্ধ ছিল। বিখ্যাত সব সংঙ্গীত শিল্পী ও দরবারের উচ্চাঙ্গের সংঙ্গীতসহ সব ধরণের সংগীতকে আমজনতার হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে প্রথম ও প্রধান অবদান কলের গানের বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও স্থপতি শামীম আমিনুর রহমানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কলের গান: সেকাল-একাল’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথীর বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইজাহার বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। নিয়মিত নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা উপাদান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এ ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। সকল শিল্পের মধ্যে অন্যতম সেরা শিল্প সংগীত। গীত, বাদ্য ও নৃত্য এ তিনের সমন্বয়ে সংগীত।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কলের গানের আগমনের ফলে উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে প্রায় সব শিল্পীর গান আজ আমাদের জন্য অবারিত। সময়ের সাথে প্রযুক্তিগত নানা উৎকর্ষতায় নব্বই দশকের পরে গ্রামোফোন রেকর্ড ব্যবহার ও উৎপাদন কমে আসে বা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নতুনকে পথ ছেড়ে দিতেই হবে। এ প্রর্দশনীর মাধ্যমে র্বতমান প্রজন্মের কাছে একটি চমৎকার অধ্যায় সর্ম্পকে ধারণা দেয়া যাবে বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৬৮ ঢাকায় চলচ্চিত্রের নির্মাতা স্বনামখ্যাত চিত্রপরিচালক সালাউদ্দিন প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রেকর্ডের নাম ছিল ‘ঢাকা রেকর্ড’। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রথম প্রকাশক বিখ্যাত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটিও সেই উত্তাল সংগ্রামের সময় প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান, তিনি এ দেশের সংগীতসম্পদ পল্লিগীতির প্রতি অনুরাগী ছিলেন বলে অনেক অপ্রতিষ্ঠিত শিল্পীকে দিয়ে গানের রেকর্ড বের করেছিলেন। ফলে এক অমূল্য গানের সম্পদ রেকর্ড আকারে রক্ষা পেয়েছিল।
যার সংগ্রহের এ সকল দুর্লভ কলের গানের যন্ত্র প্রদর্শনী হয় স্থপতি শামীম আমিনুর রহমান বলেন, আমি আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি খুজে পেতেই এই কলের গানের যন্ত্র খুজতে শুরু করি। মূলত ইতিহাস প্রিয়তা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকেই আজকের এই অবস্থান।
শামীম আমিনুর রহমান কথা প্রসঙ্গে আরও বলেন, প্রথম ক্যাননের ক্যামেরা দিয়েই আমার এই সংগ্রহ সৃষ্টি, যদিও পরবর্তীতে সেটা আমি হারিয়ে ফেলি।
এই সংগ্রাহক আরও বলেন,আমি সংগ্রহ করেছি সেই সব জিনিস যা সচল এবং ব্যবহারযোগ্য ।
স্থপতি শামীম আমিনুর রহমান একাধারে একজন সঙ্গীতবোদ্ধা এবং সঙ্গীত শিল্পীও বটে। বর্তমানে তার ঢাকার বাসাকে ছোটখাটো মিউজিয়াম বললেও অত্যক্তি হবেনা।
কি কি সংগ্রহে আছে জানতে চাইলে শামীম বলেন, এনালগ যত প্রকার টেলিফোন আছে প্রায়ই বলতে গেলে সবই আছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্রাণ্ডের হাতগড়ি, রেডিও, ট্রানজিস্টার, নানা রকমের চিঠি, বিশেষ করে টেলিগ্রাম এই ধরণের।
পরে এ অনন্য প্রর্দশনী আয়োজনের জন্য বাংলাদশে জাতীয় জাদুঘর ও স্থপতি শামীম আমিনুর রহমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রর্দশনীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রতিমন্ত্রী।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. কামরুজ্জামান, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, জনাব মফিদুল হক, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং এলিজা বিনতে এলাহী, ভ্রমণকারী ও লেখক।
কলের গান “ সেকাল-একাল’’ শীর্ষক বিশেষ এই প্রদর্শণী (২৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে) ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫:০০ মিঃ এবং শুক্রবার বিকাল ৩:৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭:০০ মিনিট পর্যন্ত প্রদশর্নী চলবে। সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলেও জানান আয়োজকরা।