ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকায় সড়ক নির্মাণ
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের সম্প্রসারিত ২২৫ মিটার অংশে পাথরের পরিবর্তে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে এই সড়ক নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সড়ক গবেষণাগার। উন্নত দেশে বিটুমিনে প্লাস্টিক মিশিয়ে সড়ক নির্মাণের ধারণা পুরোনো হলেও এটিই দেশে প্রথম প্লাস্টিকে নির্মিত সড়ক।
সড়ক গবেষণাগারের তথ্য বলছে, অন্য দেশে সড়কের শুধু উপরিভাগে (সারফেস কোর্সে) পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশানো হয়। সড়ক নির্মাণে যত উপাদান ব্যবহৃত হয়, এর মাত্র পাঁচ শতাংশ বিটুমিন। তাতে আট শতাংশ প্লাস্টিক মেশানো হয়, যা পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে শুধু পিচ ঢালাইয়ে নয়, নিচের স্তরে (বেইজ কোর্স-১) পাথরের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সড়ক নির্মাণে অন্য দেশের তুলনায় বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক আহসান হাবীব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেনের গবেষণা অনুযায়ী সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করে নির্মিত সড়কের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। পরীক্ষামূলক হওয়ায় খবরটি প্রকাশ করা হয়নি। গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) সাত মাস পর সড়কটি আমরা ঘুরে দেখেছি।
তিনি বলেন, সড়কে বিটুমিনের ভলিউমের একটি পারসেন্টেন্স ব্যবহার করেছি। আর সেকেন্ড বেইজ টাইপ-১ এক সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এটা মোটামুটি পাঁচ শতাংশ। এটা আমরা যদি ব্যবহার করতে পারি, তাহলে রাস্তায় পড়ে থাকা হিউজ পরিমাণ প্লাস্টিক দিয়ে সড়ক তৈরি করতে পারব। এর ফলে সড়ক নির্মাণে সরাসরি খরচ কমে যাবে। এটা দীর্ঘস্থায়ী, সবকিছু মিলিয়ে এটি ব্যবহার করলে আমরা আরও বেশি বেনিফিটেড হব।
জানা গেছে, বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এই মানের বিটুমিনের গলনাঙ্ক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলমান তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলছে। আবার ভারী বৃষ্টিতেও এই পিচের ঢালাই ভেঙে যায়। টেকসই পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রির বেশি, যা বর্ষাতেও টেকে। এক টন ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনের দাম ৮৪ হাজার টাকা। সমপরিমাণ পিএমবির দাম এক লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্লাস্টিক মিশ্রিত সড়কটিও ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনে নির্মিত। এর সঙ্গে মোট আট শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য মেশানো হয়েছে।
সওজ বলছে, বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত পণ্যবহনে সড়ক নষ্ট হয়। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতায় সড়কে রাটিং (উঁচু নীচু হয়ে যাওয়া) এবং ডিসট্রেস (ফেটে যাওয়া) বাড়ছে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ঢালাইয়ে রাটিং হয় না। আবার প্লাস্টিকের ব্যবহারে বিটুমিন এবং পাথর আমদানি কমবে।
২০০৫ সাল থেকে ১৫ বছরে দেশে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার তিন কেজি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে নয় কেজি হয়েছে। ঢাকায় দৈনিক ১০ হাজার কেজি কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এর মাত্র ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ভাগাড়ে যায়। বাকিটা সড়কে থেকে যায়। সেখান থেকে নদী, জলাশয়ে যায়। এক কিলোমিটার প্লাস্টিক সড়ক বছরে ১৬০ টন কার্বন নিঃসরণ কমাবে। যা ১০৬টি গাড়ির এক বছরের কার্বন নিগর্মনের সমান।
এমআর