বোয়িং এর প্রথম যাত্রা আর্ন্তজাতিক মহাকাশ স্টেশনে
মিশনটি সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পাশাপাশি আইএসএস থেকে ক্রু পরিবহন সরবরাহ করা দ্বিতীয় বেসরকারি কোম্পানি হতে যাচ্ছে বোয়িং।
নতুন এক মার্কিন মহাকাশযান যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। আর বোয়িংয়ের এই নভোযানে যাত্রা করতে যাচ্ছেন নাসার দুই নভোচারী।
উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের ‘স্টারলাইনার’ নামের মহাকাশযান এই প্রথম নভোচারী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করতে যাচ্ছে।
এর তৈরি ও উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জের কারণে এ মিশনে কয়েক বছর দেরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মিশনটি সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পাশাপাশি আইএসএস থেকে ক্রু পরিবহন সরবরাহ করা দ্বিতীয় বেসরকারি কোম্পানি হতে যাচ্ছে বোয়িং।
এ ধরনের মহাকাশযান নাসা আর পরিচালনা করতে চায় না। তাই সংস্থাটি এখন বাণিজ্যিক খাতের দিকে ঝুঁকছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
পরীক্ষামূলক এ উড্ডয়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৪ মিনিট।
তবে, এ উড্ডয়ন বোয়িংয়ের জন্য কিছুটা বিপদসংকুলও হতে পারে। একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে তাদের যাত্রীবাহী প্লেনের ব্যবসা চাপের মুখে রয়েছে। এ ছাড়া, খোদ স্টারলাইনার মহাকাশযানটি তৈরিতেও অসুবিধার কারণে তদন্তের অধীনে রয়েছে কোম্পানিটি।
ফলে, “এটি বোয়িংয়ের জন্য সত্যিই একটি বড় দিন।” – বলেছেন ওপেন ইউনিভার্সিটির মহাকাশ বিজ্ঞানি ড. সিমিয়ন বারবার।
“কোম্পানিটি অনেক দিন ধরে প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া, তাদের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট নিয়ে কিছু সমস্যাও হয়েছে, তাই এর ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
২০১৫ সালে স্টারলাইনারের প্রথম মানবহীন পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে যায় ২০১৯ পর্যন্ত। শেষমেশ যখন পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হয়, অভ্যন্তরীণ ‘ক্লক ম্যালফাংশন’-এর কারণে যানটির থ্রাস্টারে ‘ওভার-ফায়ারিং’ হয়। ফলে, এত বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছিল যে নভোযানটি মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি।
২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয় প্রচেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু এটি আবারও পিছিয়ে যায় ২০২২ সালের মে পর্যন্ত । অবশেষে যখন স্টারলাইনার তার মিশন শেষ করতে পেরেছিল তখনও ‘থ্রাস্টার’ ও ‘কুলিং সিস্টেমের’ কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ ছিল বলে লিখেছে বিবিসি।
তবে, নাসা ও বোয়িং নভোচারীসহ পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের অনুমতি দিত না, যদি না তারা নিশ্চিত হত যে সকল ত্রুটির সমাধান করা হয়েছে। পাশাপাশি, মহাকাশযানে এরইমধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে উড্ডয়ন বাতিল করা হবে।
প্রাক উড্ডয়ন সংবাদ সম্মেলনে এক প্রতিবেদক নভোচারীদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ত্রুটিগুলো তাদের ও উড্ডয়ন বন্ধু ও পরিবারের জন্য ‘ভয়ের’ হয়ে উঠবে কি না?
নভোচারী ব্যারি উইলমোর বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যাকে “বিপত্তি বা ত্রুটি” হিসাবে বর্ণনা করা ভুল হবে।
“আমরা এগুলোকে এক একটি ধাপ এগিয়ে যাওয়া বলতে পারি। একটি সমস্যা সামনে এসেছে এবং সেগুলোকে সংশোধন করা হয়েছে। আমরা আমাদের পরিবারের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি যেন তারা বুঝতে পারেন। যোগ করেন তিনি।
“আমরা সবাই এখানে আছি কারণ আমরা সবাই প্রস্তুত। আমাদের পরিবার ও বন্ধুরা সব শুনেছে, আমরা কথা বলেছি। তারা খুশি ও গর্বিত যে আমরা এ মহাকাশযানটির অংশ হতে যাচ্ছি ও সবকিছু ঠিক করার প্রক্রিয়ায় রয়েছি। বলেছেন মহাকাশযানটির পাইলট, সুনিতা উইলিয়ামস।
যখন নাসা ঘোষণা করেছিল পুরনো মহাকাশ শাটলগুলো বাদ দিয়ে স্পেসএক্স এবং বোয়িং নতুন মহাকাশযান তৈরি করবে, তখন দুটি কোম্পানিকেই একই চুক্তি দেওয়া হয়েছিল। একটি তাদের ক্যাপসুল বা মহাকাশযানকে পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত করা ও ছয়টি অপারেশনাল মিশনের জন্য তহবিল দেওয়া।
স্পেসএক্সের চুক্তির মূল্য ছিল ২৬০ কোটি ডলার, অন্যদিকে বোয়িং পেয়েছিল ৪২০ কোটি ডলার। স্পেসএক্স ২০২০ সালেই পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে যেতে পেরেছিল। অর্থাৎ, বোয়িং চার বছর পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানেও প্রচুর অর্থ খরচ করেছে।
মহাকাশযানটির পেছনের পরিষেবা ‘মডিউলে’র সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায় স্টারলাইনার ১৬.৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া। এটি অ্যাপলো মিশনের ক্যাপসুলের চেয়েও বেশি চওড়া। এতে সাতজন পর্যন্ত নভোচারী ধারণ করার জায়গা থাকলেও এটি সম্ভবত নিয়মিতভাবে চার জন নভোচারী নিয়েই মিশন পরিচালনা করবে। এ ছাড়া, ক্যাপসুলটি ১০বার পর্যন্ত ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে তৈরি বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে অন্তত ১০ দিনের জন্য আইএসএসের সঙ্গে যুক্ত থাকবে স্টারলাইনার। ফিরে আসার সময়, আগের মার্কিন মহাকাশযানগুলোর মতো সমুদ্রে নামার বদলে, স্টারলাইনার দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অংশের ভূমিতে ল্যান্ড করবে। একটি হিট শিল্ড ও প্যারাসুট অবতরণের গতি কমিয়ে দেবে, ও মাটি স্পর্শের মুহূর্তটি সহনীয় করতে এয়ারব্যাগ খুলে যাবে।
সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে হলে, স্টারলাইনারকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়মিত ক্রু মিশনের জন্য পাঠানো হবে। এটির পরবর্তী উড্ডয়ন আগামী বছরের শুরু নাগাদ হতে পারে। আর সে সময়ে এটি চারজন নভোচারীর পাশাপাশি বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সরবরাহ বহন করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
সোনালী বার্তা/এমএইচ