বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

শতভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায় নেবে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১০৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে ২ হাজার ৯৬৮টি প্রতিষ্ঠানে। আর ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। অনুত্তীর্ণদের তালিকায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস না করায় শিক্ষকদের দায়ী করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেউ পাস করেনি— এমন প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কম সংখ্যক শিক্ষার্থী হলেও তারা কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শতভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায় এড়ানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে।

রবিবার ফল প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘কাম্য শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরকারি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যাবে না।

কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যে কারণে শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্র থাকা উচিত কিনা, সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩টি, রাজশাহী বোর্ডে ২টি, দিনাজপুর বোর্ডে ৪টি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যেসব বিদ্যালয়ে শতভাগ অনুত্তীর্ণ যেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব সুখ্যাতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে এদের কেউ পাস করেনি। বিদ্যালয়টির নিম্ন মাধ্যমিক স্তর (অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। আর মাধ্যমিক স্তর (নবম ও দশম শ্রেণি) পর্যন্ত নন-এমপিও। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো এই প্রতিষ্ঠানটিতে কেউ পাস করেনি। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতে অংশ নিয়েছিল ১১ জন, পাস করেছিল ৬ জন। এবার প্রথমবারের মতো শতভাগ অনুত্তীর্ণের তালিকায় রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম জানান, মূলত বাল্য বিয়ের সমস্যা ফেস করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। তিনি বলেন, ‘বাল্য বিয়ের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী কমে গেছে। এবার যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যেও বিবাহিত রয়েছে।’

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌমহনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেনি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘোগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি।

প্রতি বছর শতভাগ অনুত্তীর্ণ থাকা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতভাগ ফেল করার জন্য শিক্ষকরা অবশ্যই দায়ী। তবে এর দায় শুধু শিক্ষকদের দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। শিক্ষা বোর্ডসহ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোরও দায় রয়েছে।

শতভাগ অনুত্তীর্ণের দায় কার জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু শিক্ষকরাই দায়ী, তা নয়। শিক্ষক, অভিভাবক এবং আমরা সংশ্লিষ্ট সবাই কমবেশি দায়ী। আমরা এ বছর থেকে ভিন্ন রকম ব্যবস্থা নেবো। তাছাড়া শতভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই নন-এমপিও।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষার অংশীজন শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা প্রশাসন সবাই দায়ী। গত বছর ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি, এবার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১টি। কেন কেউ পান করে না তা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। এর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আর সে কারণে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।

সোনালী বার্তা/ এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর