মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক এই কামনা বুদ্ধ পূর্ণিমায়

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৬০৭ Time View
Update : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

গৌতম বুদ্ধ যে অহিংসা ও শান্তির বাণী প্রচার করে গেছেন, তা অন্তরে ধারণ করে উদযাপিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা।

বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা এই পূর্ণিমা তিথিতে স্নান করে শুচিবস্ত্র ধারণ করছেন, মন্দিরে মন্দিরে চলছে বুদ্ধের বন্দনা। অর্চনার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনায় স্মরণ করা হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তককে।
রাজধানীতে বুদ্ধ পূর্ণিমার মূল আয়োজন হয় সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে। মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারেও রয়েছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।

বৌদ্ধদের বিশ্বাস, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি বোধিলাভ করেন এবং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি নির্বাণ লাভ করেন।

সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তার আবির্ভাব, বোধি লাভ ও নির্বাণ- তিন ঘটনাই বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে ঘটেছিল বলে একে বলা হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
বৌদ্ধ দর্শনের মূল লক্ষ্য সত্যকে উপলদ্ধি করে দুঃখমুক্তি। বুদ্ধের শিক্ষা- মানুষ কর্মের অধীন, জগতে কর্মই সব। যার যেমন কর্ম, তিনি ফলও পাবেন তেমন। এ দর্শনের মূলমন্ত্র- ‘সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু’, অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

এ বিহারের অধ্যক্ষ আনন্দ মিত্র মহাথেরো বলেন, “দিনটি আমাদের কাছে মহাপবিত্র, মহাগুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধ সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনার কথা বলেছেন। বুদ্ধ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীকে লক্ষ্য করে বলেননি যে, ওমুক ভালো থাকুক, তুমুক ভালো থাকুক। বুদ্ধ সকল প্রাণীর শুভ কামনা করেছেন, সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেছেন, তিনি শান্তির কথা বলেছেন, তিনি সকল প্রাণীর প্রতি দয়া পোষণ করেছেন।

আমরা যারা বৌদ্ধ ভিক্ষু আছি, আমরা সকল প্রাণীর প্রতি, সকল মানবজাতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করছি। সকল মানবজাতি যেন ভালো থাকে, শান্তিতে থাকে, সকলে যেন সুন্দর দেশ, সুন্দর জাতি, সুন্দর পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারে, সেই আশাই করছি।
সকাল সাড়ে ৭টায় সংগীতের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ বন্দনার পর সবুজবাগ বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়, এ সময় ওড়ানো হয় বেলুন।

এরপর ভক্তরা আসতে শুরু করেন বিহারে। স্নান সেরে শুচিবস্ত্র ধারণ করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত হন তারা।

সকাল সাড়ে ৯টায় বৌদ্ধ পূজা মাথায় নিয়ে ভক্তরা মন্দির প্রদক্ষিণ করেন। এ সময়ে বাদক দল ঢোল বাজায়।

সকালের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল, ও অষ্টাঙ্গ উপোসথশীল গ্রহণ, মহাসংঘদান, ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান, ত্রিপিটক পাঠ, প্রদীপ পূজা এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা।

প্রার্থনা শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পাত্রে জল ঢেলে মৃত স্বজনদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে নানা উপচারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। বিহারের বোধিবৃক্ষে পত্র-পুষ্প-জলে পূজা দেওয়া হয় গৌতম বুদ্ধকে।
বেলা সাড়ে ১১টায় সবুজবাগ বৌদ্ধ বিহারে পিণ্ডদানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সকালের পর্বের অনুষ্ঠান।

দিনটি উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। বঙ্গভবনে বিকালে রয়েছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর