বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

সুসন্তান গড়ে তোলার উপায়

ইসলাম ডেস্ক / ১৩৬ Time View
Update : শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪

তাদের সুশিক্ষা দিয়ে ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা গেলে মৃত্যুর পরও এর সুফল পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু তিন ধরনের আমল জারি থাকে।
এক. সদকায়ে জারিয়া (চলমান পুণ্য। দুই. ওই জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (নাসায়ি, হাদিস ৩৬৫১)

অর্থাৎ নেক সন্তান মা-বাবার শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি। তবে সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে মা-বাবাকে প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিম্নে এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ তুলে ধলা হলো—

গুনাহমুক্ত পরিবেশ

শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গুনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিচ্ছন্নতা শেখানো

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুল (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন।

পাশাপাশি শিশুদের পরিপাটি রাখার চেষ্টা করতে হবে। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালনপালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি এখানে খোকা আছে কি ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাঁকে পুঁতির মালা, সোনা-রূপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পড়াচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো। ’ (বুখারি, হাদিস ২১২২)

সৃজনশীল খেলনা

শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়, এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভিডিও গেম ও কার্টুন থেকে দূরে রাখা

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই। তাই আমাদের উচিত শিশুদের এ ধরনের খেলা থেকে যত দূর সম্ভব দূরে রাখা।

অনেক শিশু কার্টুন দেখা ছাড়া খাবার খেতে চায় না। অথচ এই কার্টুন তাদের মানসিক গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা। যেমন—পোষা কবুতর, পাখি, মুরগি ইত্যাদি দেখিয়েও খাওয়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া

দ্বিনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।

নামাজে অভ্যস্ত করা

শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার। ’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস ৫০৯৪)

বই পড়ায় উৎসাহী করা

বই শিশু মনের সুপ্ত ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। শিশুরা গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে। তাদের বিভিন্ন নবীর গল্প শোনানো যায়। শিশুদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামি বই পাওয়া যায়। গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধন হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শিশুরা জটিল শব্দ ও বাক্য সহজে বুঝতে পারে। এতে তার পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় শিশুর বুদ্ধিমত্তা।

সোনালী বার্তা/ এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর