পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি, শুধু বড়লোকেরাই ফ্ল্যাটে থাকবে তা হতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঢাকায় কোনো কাঁচা বস্তি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকবে না। সুন্দর পরিবেশে সবাই বসবাস করবে। সেই ব্যবস্থা করে দেবো। এই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।
আজ শনিবার রাজধানীর পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের স্থানে ১০তলা পাইকারি মার্কেট, শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকায়নসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। বস্তিতে যেরকম ভাড়া সেরকম ভাড়াই দেবে, কিন্তু তারা ফ্ল্যাটে থাকবে। শুধু বড়লোকেরাই ফ্ল্যাটে থাকবে সেটা হতে পারে না। আমাদের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে। স্বল্প ভাড়া, কেউ যদি প্রতিদিন ভাড়া দিতে চায়, সেই ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি সাত দিনের ভাড়া দিতে চায়, সে ব্যবস্থা আছে। কেউ মাসের ভাড়া দিতে চাইলে সে ব্যবস্থাও হবে। আমরা ইতোমধ্যে ৩০০ পরিবার তুলেছি।
পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের এক টুকরো জমি আছে, তারা একটা ফুলের গাছ, একটা ফলের গাছ হলেও লাগান। যাদের গ্রামের বাড়ি আছে, সেখানে যেন অনাবাদি জমি না থাকে, সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
আসন্ন ঈদুল আজহায় যেখানে-সেখানে পশু কোরবানি না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোরবানির জন্য সারা দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করবে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরান ঢাকার সঙ্গে আলাদা নাড়ির টান আছে। এই অঞ্চলের মানুষ ভালো থাকুক সেটাই চাই। একসময় ঢাকায় বিদ্যুৎ-পানি ছিল না। এ জন্য বিএনপির এক নেতা ধাওয়াও খায়। আমরা ক্ষমতায় এসে পানি পরিস্থিতির অনেক উন্নতি করেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ছয় মাস পরপর পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও যেন পানি না জমে মশার প্রজননক্ষেত্র না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। বিল কমাতে চাইলে বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দালাল ধরে টাকা খরচ করে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার চেয়ে দেশে কিছু করা ভালো। মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যুব সমাজকে দূরে থাকতে হবে।’ এ সময় পার্ক যেন মাদক সেবনের জায়গা না হয়, কাউন্সিলরদের সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘দুর্নীতি, লুটপাট ও মানুষ খুন করে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। এরপর দেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্র চোরাচালানির দেশে পরিণত হয়। সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া এখন বিদেশ থেকে দেশে অশান্তির হুকুম দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের সেবা করে। ৭৫এর পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ২১ বছর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। দেশ এগোতে পারেনি। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ থেকেই বিএনপি নির্বাচন বিমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যত উন্নত হচ্ছে, মানুষের কাজকর্ম তত বাড়ছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকাতে একটি মেট্রোরেলপথ তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মেট্রোরেলপথ নির্মাণ করা হবে। কিছু উপর দিয়ে যাবে, আবার কিছু পাতাল দিয়ে যাবে। সেইভাবেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম।
সোনালী বার্তা/এমএইচ