মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

অসহায় গরু খামারি বেড়েছে খাদ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৭৮ Time View
Update : শনিবার, ১ জুন, ২০২৪

অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ব্যতিক্রম নয় রংপুরের দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি ও গৃহস্থরা। তবে প্রান্তিক খামারি ও গৃহস্থরা নিজেরাই গাভির পরিচর্যা করে কোনো রকমে টিকে থাকলেও বেশি সমস্যায় পড়েছেন বড় খামারিরা। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে এসব খামারির খামারের আকার।

এ অবস্থায় গো-খাদ্যের দামের তুলনায় দুধের দাম না পেলে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দুধ উৎপাদন ও গাভির সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রান্তিক ও মাঝারি খামারিদের সংখ্যাও।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার ক্ষুদ্র খামারি আরিফুজ্জামান। এক বছর আগেও তার খামারে ছিল ৬টি গাভি। এখন আছে ৩টি। লাগামহীন গো-খাদ্যের দাম এবং দুধের যথাযথ দাম না পাওয়ায় ধীরে ধীরে ছোট করে ফেলেছেন খামারের আকার।

গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। রংপুরে সমিতির আওতাধীন খামার ১২ হাজারের বেশি। এর বাইরে আরও আছেন ১৮ থেকে ২০ হাজার খামারি। জেলায় প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।

সোনালী বার্তাকে আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এক বছর আগে বাজারে ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিক্সড ভুসির দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এখন সে ভুসির দাম এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৩৮০ টাকা। ফিডের কেজি ছিল ২৫ থেকে ২৭ টাকা, এখন যা ৪০ থেকে ৪২ টাকা হয়েছে।
তিনি জানান, এক বছর আগে এক লিটার দুধ বিক্রি করেছেন ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়। এখন বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গো-খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম।

আরিফুজ্জামান বলেন, ‘বাজার থেকে কেনা দানাদার খাবারের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস ও খড় কিনতে হয়। এক হাজার শুকনো খড়ের বিচালির দাম ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। একটা গাভির পেছনে দিনে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ। নিজে ও পরিবারের লোকজন খামার দেখাশোনা করায় শ্রমিক খরচ লাগে না। এরপরও খামার থেকে খুব বেশি লাভ হয় না। বাইরের শ্রমিক দিয়ে কাজ করালে লোকসান গুনতে হতো।

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি দুধের ঘনত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেয়। তবে ভালোমানের দুধ উৎপাদন হয় কম। এ অবস্থায় কোম্পানিতে দুধ বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন বাড়ি ও হোটেলে দুধ বিক্রি করি। এতে কিছুটা বেশি দাম মেলে।

এ বিষয়ে রংপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের (মিল্কভিটা) ব্যবস্থাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুধের ঘনত্ব অনুয়ায়ী দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। বর্তমানে ভালোমানের এক লিটার দুধ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং এর নিচে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।

আগের তুলনায় দুধের উৎপাদন ও খামারির সংখ্যা কমে আসছে জানিয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। বর্তমানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয়।

খামারিদের টিকে থাকতে হলে দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমাতে হবে। এ জন্য সরকারি খাস জমি বা চর এলাকার পতিত জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষের ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা করতে হবে।

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ রঘুবাজার এলাকার খামারি মতিয়ার রহমান জানান, রঘুবাজার এলাকায় বছর দুয়েক আগে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমিতির সদস্য ছিল দেড় শতাধিক। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ জনে। আগে একেক সদস্যের বাড়িতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮টি করে গাভি থাকলেও এখন রয়েছে এক থেকে ৩টি। অব্যাহত লোকসানের মুখে গাভির সংখ্যা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। খরচ কমাতে বাড়তি শ্রমিক না রেখে নিজেরাই লালন-পালন করছেন।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর