বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৩ ঘন্টা ধরে পিটিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২১১ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) শাহরীন রহমান (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ দেওয়ায় আবারও তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। একই সঙ্গে পুনরায় অভিযোগ দিলে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নং) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বুধবার ওই শিক্ষার্থী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট ড. মো. তানভীর ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়ে বিচার চেয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরীন রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন।

ভুক্তভোগী শাহরীন রহমান বলেন, সোমবার কথা-কাটাকাটির জেরে আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিচার চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা। এজন্য আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়ামকে দিয়ে ঘুম থেকে তুলে মঙ্গলবার রাত ২টায় সোহেল রানার কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩০৬ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১০-১৫ জন আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। তারা এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারলে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকেন। সেই সঙ্গে বলতে থাকেন, কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? আর দিবি? একপর্যায়ে রড দিয়ে সারা শরীরে পেটাতে শুরু করেন। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে নির্যাতন। ওই সময় মনে হচ্ছিল মরে যাবো।

তিনি আরও বলেন, মারধরে অংশগ্রহণ করেছেন আশিকুজ্জামান লিমন (পিইএসএস), ইসাদ (পিইএসএস), রায়হান রহমান রাব্বি (পদার্থবিজ্ঞান), বেলাল হোসেন (এফবি), শেখ বিপুল (পিইএসএস), রাইসুল হক রানাসহ (ফার্মেসি) কয়েকজন। প্রাণে বাঁচতে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাই। এ সময় ভাই বলে, ‘কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো।’ পরে ভাই আমার বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেল দেয়। বলে, ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি। ক্যাম্পাসে যেন আর না দেখি। এরপর ঘটনা যাতে কাউকে না জানাতে পারি, সেজন্য আমার ও বন্ধু আমিনুল ইসলামের ফোন রেখে দেয়। ঘটনা জানাজানির ভয়ে সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে আমাকে শহরে নিয়ে যায় আমিনুল ও রাজীব। দুপুরে গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয় তারা। বাড়ি পৌঁছানোর পর আমার মাকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, এসব কথা কেউ জানলে বোমা মেরে বাড়ি উড়িয়ে দেবো।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। গতকাল সারাদিন আমি যশোর শহরে ছিলাম। রাত ৩টার দিকে রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছি। মারধরের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। সে জানিয়েছে তাকে আবরার ফাহাদের মতো মারা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। সেই সংগঠনের সদস্যরা একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর