নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম সীমান্ত দিয়ে আসছে চোরাই গরু
প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে অবৈধ গরু চোরাচালান বেড়ে যায়। এসব উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে পাচারের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয় গরু চোরাকারবারিরা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম সীমান্ত দিয়ে অবাধে মিয়ানমারের চোরাই গরু ঢুকছে বাংলাদেশে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিক সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। এসব সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম হওয়ায় নির্বিঘ্নে নিয়ে আসছে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতের গরু ও মহিষ।
অবৈধ গরু-মহিষ নিয়ে আসার শ্রমিক যোগানদাতা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাম হাতিরছড়া, ভালুখাইল্লা, কালাচাইন্দা, চাকঢালা, জামছড়ি, জারুলিয়াছড়ি, আশারতলী, ফুলতলী, দোছড়ির সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চোরাই গরু নিয়ে আসেন। পরে পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়ার বাজারে গরু তুলা হয়।
অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে দেশে নিয়ে আসা হাজার হাজার গরু-মহিষ আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে এনে পোয়ামোরী, মারান পাড়া, বড় আঘলা, ভেওলা পাড়া, বড় বেটি, ছোট বেটি, মাতামুহুরি নদীর শেষ সীমান্তে বিভিন্ন জায়গায় রাখেন পাচারকারীরা। সুযোগ বুঝে গরুগুলোকে আলীকদম বাজারে নেওয়ার পর সেখানে বাজার ইজারার রশিদ সরবরাহ করে বৈধ বলে পাচার করা হয়।
একই কায়দায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা গরুগুলো রামু গর্জনিয়া বাজারের ইজারার রশিদের মাধ্যমে বৈধ করা হয়। সুযোগ বুঝে গভীর রাতে ট্রাক যোগে চকরিয়া, কক্সবাজার, মালুমঘাট, ঈদগাহ, রামুর আড়ৎ হয়ে এসব গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ি চাকঢালা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উচিং থোয়াং চাক বলেন, সীমান্ত এলাকায় কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির ও নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির অধীনে ১৫টি বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৪৭-৪৮ পিলারের মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু আনা হচ্ছে। শুধু এই সীমান্ত নয়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এক পয়েন্টে কঠোর হলে চোরাকারবারিরা অন্য পয়েন্ট ব্যবহার করে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোড চালু করছে তারা। পয়েন্টগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ার সুবাধে চোরাকারবারিরা পাহাড়ি পথ বেয়ে গরুগুলো সরাসরি নিয়ে যায় রামু কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া ও ঈদগা বাজারে।
গরু চোরাচালান শ্রমিক নরুল আমিন জানান, রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতারাই গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত। এসব ব্যক্তিদের প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট রয়েছে। গরু পাচারে বাধা এবং প্রশাসনের কাছে কেউ তথ্য দিলে হুমকির মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে থাকেন। তাই এসব বিষয়ে কেউ কথা বলতে চান না।
নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদমের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, এ দুই সীমান্ত দিয়ে শত শত চোরাই গরু দেশে ঢুকছে। তবে সবচেয়ে বেশি পাচার করা হয় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে। থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে আনা এসব গরু কিনে আনতে শত কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে। প্রকাশ্যে গরু এনে বিদেশে টাকা পাঠানো হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। এমনকি কারা এই বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে তারও সঠিক তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে।
আলীকদম করুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো জানান, উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকার কারণে সীমান্তে গরু চোরাচালান অনেকটা কমেছে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাকারবারিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের চোখ ফাকি দিয়ে নতুন নতুন সীমান্ত পথে গরু আনছে।
সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, যেকোনো চোরাকারবারি প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। ট্রাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হচ্ছে। বৈধ কোনো কাগজ না থাকলে গরু জব্দ করা হচ্ছে।
এমআর