৩৯ বছরের শিক্ষকতা শেষে ফুলসজ্জিত গাড়িতে বিদায়
মো. মোমেনুল হক জীবনের ৩৯ টি বছর কাটিয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে প্রিয় শিক্ষাগুরুকে সম্মান জানাতে ভুলেননি শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে ফুলে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তাকে।
বুধবার (১২ জুন) ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোমেনুল হককে ফুল সজ্জিত গাড়ী করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মোমেনুল হক ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছেন৷ ১৮ মাস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে মহান পেশার ইতি টানলেন তিনি।
এর আগেও ১৯৮৬ সালে শিক্ষকতা জীবন শুরু করে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১ বছর শিক্ষকতা করেন তিনি।
আগামী ৩০ জুন চাকরি জীবনের শেষ দিন হলেও বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ায় বুধবার (১২ জুন) তার বিদায়ের দিনে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। বিদায় উপলক্ষ্যে এদিন বরযাত্রীর বরের গাড়ির মতো করে ফুল দিয়ে সাজানো হয় একটি গাড়ি। আয়োজন করা হয় বিদায় সংবর্ধনা। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন উপহার তুলে দেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, মোমেনুল হক শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি কখনো অনিয়মের সঙ্গে আপস করেননি। তিনি যেমন শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন, তেমনি শিক্ষকদের কাছেও ছিলেন প্রিয় সহকর্মী। তাই তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এ আয়োজন করা হয়।
মোস্তাফিজ মুরাদ নামে বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যখন স্কুলে ছিলাম স্যার ছিলেন আমাদের নয়নমণি। স্যারকে ভয় পেলেও আমাদের সবার প্রিয় ছিলেন। বিদায়ের কথা শুনে খারাপ লাগছে। স্যারের অবসর জীবন ভালো কাটুক।
সুমন ইসলাম নামে তার সাবেক এক সহকর্মী বলেন, মোমেন স্যার একজন আপাদমস্তক শিক্ষক ও সংগঠক। ২০১৬ সালে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলাম। তখন ৩৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে স্যারের স্নেহ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এমন আয়োজনে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে শিক্ষক মোমেনুল হক বলেন, দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে যা করতে চেয়েছি তার সবটাই করেছি। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সকলের সহযোগিতায় তা অতিক্রম করেছি। বিদায়বেলায় এতো আয়োজন থাকবে ভাবিনি। যে সম্মান দেখিয়ে বিদায় দিয়েছে তা আজীবন মনে থাকবে। আমার জন্য এটি স্মরণীয় একটি দিন। সুস্থ জীবনযাপনে সকলের দোয়া কামনা করি।
ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেন্ট্রাল হাইস্কুল এবং মোমেন স্যার এক ও অভিন্ন। উনার মতো শিক্ষককে এমন আয়োজন করে বিদায় দিতে পেরে ভালো লাগছে। এ স্কুলের জন্য তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।উনার অবসর জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করি।
এমআর